ঐতিহ্যবাহী ধান সংরক্ষণাগার গোলা এখন বিলুপ্তপ্রায়

সময়: 6:53 pm - January 25, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 382 বার
ছবি : মো: ফখরুল ইসলাম

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারা বহন করা মাটির তৈরী গোলাতে সারা বছর ধান সংরক্ষণ করা যায়। মোঘল সাম্রাজ্য, বৃটিশ সাম্রাজ্য থেকে এখন বর্তমান সময় পর্যন্ত এর ব্যবহার হয়ে আসছে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার দেওয়ান পাড়ায়। মুক্তিযোদ্ধের সময় মুক্তি বাহিনীর জন্য শুকনা খাবার মজুদ থাকতো এবং রাজাকার আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী তা লুটপাট করে গ্রামের অনেক গোলাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো।

মাটির তৈরী এসব গোলা শেষ হতে হতে আর মাত্র ৬টি টিকে আছে । যেখানে এসকল গোলার ১টি গোলাতে ৫০০-৬০০ মন অনায়েসে ১বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও গোলাগুলোকে বাচিয়ে রেখেছেন পরিবারটি।

নিয়ামতপুর উপজেলার দেওয়ান পাড়ায় সাবেক তিনবারের সাংসদ প্রয়াত আজিজুর রহমানের বাড়ির সামনে তাদের বংশীয় ধারার চিহ্ন এসকল গোলা চোখে পড়ে সকলের। মুক্তিযোদ্ধ চলা কালীন সময়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাল চিড়া চিনি ইত্যাদি শুকনা খাবার সংগ্রহ করে এই গোলাগুলোতে রাখা হয়েছিলো । তখন মজুদকৃত চাল এবং চিঁড়া রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়েছিলেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর গ্রামের রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোলাতে রাখা শুকনা খাবারগুলো লুটপাট করে নেয় এমনটাই বলছিলেন প্রয়াত সংসদের পুত্র সাইদুর রহমান।

তিনি জানান, গুডাউন বা বর্তমান পদ্ধতির থেকেও অধিক ভালো থাকে এমন মাটির তৈরী এমন গোলাতে। একটি গোলাতে ৫০০-৬০০মন ধান খুব ভালো থেকে তা ১বছরের অধিক সময় পর্যন্ত বলে জানান তিনি।

প্রায়ত সাংসদের ভাতিজা জাহিদ হাসান বিপ্লব জানান, তার নিজস্ব একটি গোলা রয়েছে ।তাতে তিনি অনায়েসে ৪৫০-৫০০মন ধান রাখতে পারেন। এবং যখন প্রয়োজন মনে করেন সেখান থেকে ধান বিক্রি করে তার প্রয়োজন মেটাতে পারেন । এছাড়া মাটি থেকে কিছুটা গোলার মুল স্তম্ভ থাকায় তাতে ইদুর ধান খেতে পারে না । এতে করে ধানটাও ভালো থাকে। তিনি বলেন একটি গোলা তৈরিতে সব মিলিয়ে ৮০থেকে ৯০হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকে তারা এই গোলাগুলোকে দেখে আসছেন। এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছে থেকে শুনে আসছেন। গোলা ব্যবহার যদি পুনরায় চালু করা হয় তাহলে ধান সংরক্ষণ করে কৃষক তা নিজে মজুদ করতে পারবে। এতে করে তারা লাভবান হবেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ মনে করেন, গোলা এবং মটকা ব্যবহারের প্রথা বজায় রাখা দরকার। কৃষক নিজে ধান মজুদ করতে না পেরে দাম কমের সময় সকল ধান বিক্রি করতে বাধ্য হোন। যদি সকল কৃষক বাড়ির সামনে এমন মটকা বা গোলা বানিয়ে তাদের ধান সংরক্ষণ করে রাখতে পারতো তারা তাদের প্রয়োজনের সময় তা বিক্রি করতে পারত। এতে করে কৃষক লাভবান হত বলে মনে করেন তিনি।

এমন গোলা পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক বহন এর পাশাপাশি কৃষকের চিন্তা মুক্তির একটি বিষয় হতে পারে। এই প্রথা বজায়ের পাশাপাশি এর ব্যবহারে উপকৃত হবেন কৃষকরা।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর