বগুড়ায় নানীর হাতে খুন হলো ৬ বছরের পিতৃহীন শিশু সিয়াম
বগুড়া নন্দীগ্রামের তেতলাগাড়ী গ্রামের ৬ বছরের অবুঝ শিশু সিয়াম, কয়েক বছর আগে হারিয়েছে নিজের পিতাকে। জীবন কি বুঝে উঠার আগেই মৃত্যুকে আপন করে নিতে হলো তারই আপনজনের রোশানলে। জবাই করে হত্যা করা হয়েছে এই শিশুকে যা করেছে সিয়ামের মায়ের আপন খালা নেপথ্যে হত্যাকারীর মনের রাগ ও ক্ষোভ মিটানো।মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার ধানক্ষেতে গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া শিশু সিয়াম (৬) এর লাশ উদ্ধারের ২ ঘন্টার মাঝেই প্রধান আসামীকে গ্রেফতারপূর্বক হত্যার মূল রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা নাড়া দিয়েছে সকলের হৃদয়কে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসপি আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) অত্যন্ত আবেগঘনভাবে এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানান, শিশু সিয়ামকে যে হত্যা করেছে সে তার মা সাবিনা খাতুনের আপন খালা থানার পলিপালাশ মধ্যপাড়া গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী মালতি বেগম (৫২) যাকে ঘটনার ২ ঘন্টার মাঝেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং তার মাধ্যমে উদ্ধারও করা হয়েছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা হাসুয়া এবং হত্যার সময় মালতির পরনে থাকা বোরকা। একই সাথে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, ২ সপ্তাহ আগে সারিয়াকান্দিতে সিয়ামের খালার বাড়িতে তার মা সাবিনার সাথে মালতি বেগমের দেখা হয় এরপর তারা একসাথে তেতলাগাড়ীতে নিজ বাড়িতে আসে। সেখানে সাবিনার ভাই মমিনের জমজ বাচ্চাদের দত্তক নিয়ে চায় মালতি এ নিয়ে তাদের মাঝে মনোমালিন্যেও সৃষ্টি হয়৷ এতে মালতি ক্ষিপ্ত হয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে ক্ষোভে সাবিনার ছেলে সিয়ামের ক্ষতি করার পরিকল্পা করে।
যার জের ধরে মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮ টায় মালতি সিয়ামকে চকলেট ও চানাচুর কিনে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। রাস্তায় নিহতের মা ও মামী তাদের দেখলেও সম্পর্কে আত্মীয় হওয়ায় তাদের কোন সন্দেহ হয়নি যা স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে মালতি সিয়ামকে একটি দোকান থেকে খাবার কিনে দিয়ে তেতলাগাড়ী গ্রাম থেকে ২ কি.মি. উত্তরে শাহাজাহানপুর থানার পানিহালী এলাকার একটি ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে হাসুয়া দিয়ে নির্মমভাবে জবাই করে। পরে নিহতের দেহ পাশের একটি ড্রেনে ফেলে হাসুয়া ধান ক্ষেতে রেখে পালিয়ে যায়। গলাকাটা লাশ পরে আছে এমন সংবাদে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে গেলে পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীর তত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্তমাখা কাপড় ধৌত করার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় মূল আসামী মালতি কে। পরে সে নিজেই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হাসুয়া বের করে দেয়াসহ মূল ঘটনা স্বীকার করে মর্মে জানান এসপি আলী আশরাফ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আলী আশারাফ আরো জানান, গ্রেফতারকৃত মালতির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এই ঘটনা সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যা থেকে আপন হোক কিংবা পর সকলের থেকেই অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তান কে সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, মোতাহার হোসেন এবং ফয়সাল মাহমুদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, শাহাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিবির এস.আই আলী জাহান প্রমুখ।
রাজশাহী বার্তা/admin