পাকছে লিচু, কম হবে উৎপাদন

সময়: 10:25 pm - April 25, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 156 বার

রাজশাহীতে গাছে গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে। তবে এ বছর লিচু উৎপাদন কম হবে। কৃষিবিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা এমন তথ্যই জানাচ্ছেন। আর এ জন্য বৈরি আবহাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া গত বছর ফলন বেশি হয়েছে বলে গাছে এবার এমনিতেই কম লিচু ধরার কথা। গাছে এবার গুটিও কম দেখা যাচ্ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, গতবছর গাছে প্রচুর লিচু ধরেছিল। তাই এ বছর এমনিতেই লিচু কম ধরার কথা ছিল। এর উপরে এবার ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানারকম বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে পড়েছে লিচুগাছ। তাই ফলন হবে কম।

ড. আবদুল আলীম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লিচু হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, সেখানেও লিচুর অবস্থা ভালো না। উৎপাদন কম হবে বলে বাজারে লিচুর দাম বেশি থাকবে।

লিচুর ফলন কম হতে পারে বলে স্বীকার করেছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়ালও। এ জন্য তিনি আরও একটি কারণ জানিয়েছেন। কৃষিবিদ আবদুল আউয়াল বলেন, এবার হঠাৎ করেই শীত শেষ হয়ে গেছে। লিচুর ভালো পরাগায়নের জন্য ১২০ ঘণ্টা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই সময়টা এবার পাওয়া যায়নি। গরম শুরু হয়ে গেছে। আবার গরমের মধ্যেই কুয়াশা পড়েছে। এসব বৈরি আবহাওয়ার কারণে লিচুর উৎপাদন কম হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। কিন্তু সেটি এবার পূরণ না-ও হতে পারে। এখন গাছে থাকা লিচুর গুটি যেন ঝরে না পড়ে তার জন্য চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম, রায়পাড়াসহ কয়েকটি এলাকার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে। তবে খরার কারণে অনেক লিচু ঝরে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এতে তাঁরা চিন্তিত।

চাষিরা জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বোম্পাই লিচুর আকর্ষণ বেশি। সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে বোম্পাই লিচুরই। এবার বৈরি আবহাওয়ায় এই জাতের লিচুরই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

নগরীর রায়পাড়া এলাকার লিচুচাষি শামীম হোসেন বলেন, এবার গাছে ফুল এসেছিল কম। সেই ফুল থেকে ঠিকমতো গুটি হয়নি। শামীম হোসেন আরও বলেন, আগের বছর একটা গাছে যে লিচু হয়েছিল, এবার তার অর্ধেকও হবে না। ফলে ইজারা নেওয়া এ বাগানে তাঁকে লোকসানের হিসাব কষতে হবে।

গাছে যখন লিচুর গুটি থাকে, তখনই বাগানের লিচু কিনে নেন রাজশাহী নগরীর ব্যবসায়ী মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে তিনি রাজশাহীর বাগানে বাগানে ঘুরছেন। লিচু দেখে তাঁর মন ভরছে না। মারিফুল বলেন, বাগানে এবার অর্ধেক লিচুও উৎপাদন হবে না বলেই মনে হচ্ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার কসবা গ্রামের লিচু চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর বাগানেরও অবস্থা খারাপ। গাছে শুধু পাতা, লিচু কম। অথচ এই বাগানই গতবছর লিচুতে ভরে উঠেছিল। শহিদুল বলেন, কী কারণে ফুল কম হয়েছে, কেন লিচু ধরেছে কম- এসব তিনি বোঝেন না। তবে চোখে এটা দেখছেন যে, এখন রুক্ষ আবহাওয়ায় লিচু শুকিয়ে ঝরে পড়ছে।

আরেক লিচুচাষি আফসার আলী জানান, লিচুর গুটি টেকাতে ফল গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী ৭ থেকে ১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় পানি দিয়েছেন। কয়েক প্রকার ওষুধও দিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে এবার গাছে পোকার আক্রমণ কম বলেও জানান এই চাষি।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা বাগান ঘুরে দেখেছি কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম। তাই প্রথম দিকে লিচুতে আমের মতো রুটিন স্প্রে করা লাগেনি। কিন্তু আবহাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে শুরুতে। এখন আবার খরা চলছে। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর