চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও এখন রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি ভীতিকর
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও এখন রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি ভীতিকর। এ মাসের শুরুর দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মৃত্যুর তালিকায় বেশি নাম থাকতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীর। কিন্তু গেলো কয়েকদিনে সে চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছেন রাজশাহীরই। প্রতিদিন ভর্তি তালিকাতেও রাজশাহীর রোগী বেশি।
রামেক হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ছিলেন। অন্য তিনজনের বাড়ি রাজশাহী। শনিবার (১২ জুন) সকালে হাসপাতালে রাজশাহীর ১২২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১২০ জন, নাটোরের ১৪ জন, নওগাঁর ২৪ জন, পাবনার পাঁচজন এবং কুষ্টিয়ার একজন রোগী ভর্তি ছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর ১৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটজন, নাটোরের দুইজন ও পাবনার একজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এরও আগে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে সাতজনের করোনা পজিটিভ ছিল। অন্য পাঁচজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের বাড়িই ছিল রাজশাহী। আর দুইজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
হাসপাতালের ভর্তির চিত্র দেখলে দেখা যায় রাজশাহীর রোগীই বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলায় ৩৪৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯৫ জনই শনাক্ত হয়েছেন রাজশাহীতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্ত হয়েছেন ৩২ জন। এর বাইরে নওগাঁয় ৫৯ জন, নাটোরে একজন, জয়পুরহাটে ১০ জন, বগুড়ায় ২৭ জন, সিরাজগঞ্জে ১৫ জন এবং পাবনায় ছয়জন শনাক্ত হয়েছেন। আগের দিনও রাজশাহীতেই শনাক্ত ছিল সবচেয়ে বেশি।
‘বিষয়টা উদ্বেগের’ উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. চিন্ময় কান্তি বলেন, শুধু মৃত্যুই নয়, রাজশাহীতে আক্রান্তের হারও যথেষ্ট ভয় ও শঙ্কার। র্যাপিড অ্যান্টিজেন, আরটিপিসিআর , জিনএক্সপার্ট পরীক্ষায় মিলে রাজশাহীতে আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ। কিন্তু শুধু আরটিপিসিআর পরীক্ষায় আক্রান্তের হার ৩৯ শতাংশ এবং জিনএক্সপার্ট পরীক্ষায় ৫৭ শতাংশ। মহামারির প্রবণতাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এচিত্র বেশ খারাপ বলেও উল্লেখ করেন ডা. চিন্ময় কান্তি।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় এখন মোট সংক্রমণের ৭৭ শতাংশই নগরীর। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় কান্তি বলেন, যেসব এলাকায় ভিড় বেশি, সে এলাকায় করোনার সংক্রমণের হারও বেশি। এবং এ চিত্র প্রমাণ করে যে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ চলছে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে হিসেবে করলে, প্রকৃত চিত্র আরও বেশি।
এদিকে রাজশাহী শহরে যখন করোনার পরিসংখ্যান উদ্বেগ ছড়াচ্ছিল তখনও নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার খুব একটা গরজ দেখা যায়নি সাধারণ মানুষের। সড়ক, শপিংমল কিংবা খাবার হোটেল- সবখানেই উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। আমের হাটে তো সামাজিক দূরত্বের কিছুই নেই।
অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় মানুষের সতর্কতা ভালো ছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। সম্প্রতি এ অঞ্চল সফর শেষে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে আন্তরিকতা দেখা গেছে। তবে রাজশাহীতে এই প্রবণতা খানিকটা কম দেখেছেন বলেও জানিয়েছিলেন ডা. নাজমুল ইসলাম।
বাধ্য হয়ে গত শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত শহরে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, করোনার প্রকোপ দেখে মনে হচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ৮০ ভাগ উপস্থিতি পেয়েছে, সে হিসেবে ধারনা করা যায় রাজশাহীতেও ডেল্টার উপস্থিতি রয়েছে। এখন লকডাউন দেওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাবে।
রাজশাহী বার্তা/admin