সিরাজগঞ্জে তাঁতের লাখো নারী শ্রমিক মজুরী বৈষম্যের শিকার

সময়: 2:16 pm - March 8, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 150 বার

সিরাজগঞ্জে সমৃদ্ধ আর ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের প্রসারে মুল দায়িত্বটা জেলার লাখো নারী শ্রমিকরা পালন করলেও পুরুষের চেয়ে তারাই হচ্ছে মজুরী বৈষম্যের শিকার। একটি শাড়ী বা লুঙ্গী তৈরীতে ৯টি ধাপের মধ্যে ৬টি ধাপেই মুল ভুমিকায় অবিচল থাকছে। অথচ যুগ-যুগ ধরে এসব নারীরা পুরুষদের মত সমান তালে কাজ করলেও তাদের চেয়ে ৩/৪ ভাগের ১ ভাগ মজুরী পাচ্ছেন। বিষয়টি মহাজনদের কাছে বলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। বাজার মন্দার ওজুহাতে অতীত থেকেই সামান্য মজুরীতে তাদের কাজ করানো হচ্ছে। অধিকার বঞ্চিত এসব নারীরা ‘নারী দিবস’ সম্পর্কেও কিছু জানেনা। এক্ষেত্রে নারীর মজুরী বৈষম্য রোধে গার্মেন্ট সেক্টরের মত সরকারী ভাবে নীতিমালা তৈরীর দাবী জানিয়েছে, নারী অধিকারের সাথে কাজ করা নারী নেত্রীরা।

 

এনায়েতপুর থানার তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ গোপিনাথপুর গ্রামের শ্রীমতি আপুচি বালা (৪৬) গত ৮ বছর আগে অসুস্থ্য দিনমজুর স্বামী প্রদীব চন্দ্র সরকারকে হারিয়ে এক সন্তান সহ সংসার চালাতে নিজেই হাল ধরেছেন। বেঁছে নিয়েছেন এলাকার সকলের অন্যতম পেশা তাঁত শ্রমিকের কাজ। ভোর থেকে গভীর রাত অবদী নিরন্তর ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন চড়কার হাতল। চড়কায় এক পাশে সুতা কেটে নাটাই ও ববিনে তোলেন। এভাবে এক ডবল সুতা কাটতে তাকে অন্তত ২/৩ দিন অপরিসীম পরিশ্রম করতে হয়। এজন্য ডবল প্রতি তাকে মহাজন মজুরী দিয়ে থাকেন মাত্র ২০০ থেকে ২৭০ টাকা। এর মধ্যে সুতার মাড় তৈরীতে অন্তত ৮০ টাকা তাকে খরচ করতে হয়। তাতে দিন ৭০ টাকা হারে মজুরী পেয়ে থাকেন। তাই তিন বেলা আহার জোটানো মুসকিল এই অসহায় নারীর।

 

 

 

তিনি জানান, গাধার মত পরিশ্রম করে যে মজুরী পাই এই মজুরী দিয়ে খাওয়া চালানোই মুসকিল। তাঁতের শাড়ি কিনে পড়বো কিভাবে। এইতো আমাদের নারীদের পরিশ্রম। এভাবে কি আমরা চলতে পারি। যে শাড়ি তৈরীতে ভুমিকা পালন করছি, সেই শাড়ি মজুরী দিয়ে কিনতে পারিনা।

 

 

 

আপুচি বালা আরো জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করিয়ে ছেলেকে অভাবের কারনে আর পড়াতে পারিনি। অথচ একই ভাবে পুরুষ শ্রমিক শাড়ি-লুঙ্গি বুনলে দিন ৩০০ থেকে ৫০০/৬০০ টাকা মজুরী পান। মহাজনদের বললে তারা মজুরী বাড়াবেনা বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। তাই কি আর করা উপায় না বুঝে এভাবেই ছোট বেলা থেকেই কাজ করছি আমি।

 

 

 

তার মত মজুরী নিয়ে এমনি হতাশার কথা জানালেন একই গ্রামের মৃত বৈদ্যনাথ সরকারের স্ত্রী বৃদ্ধা তাঁত শ্রমিক মিনতি বালা (৭০) এবং নজরুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন (৬২)। তারা জানান, পরিবারের অভাবের কারনে ৭/৮ বছর বয়স থেকে সুতা কাটার কাজ করছি। তখন পেয়েছি ২৫ পয়সা মোড়া (১০টি পোল্লা)। এখন পাই ২ টাকা মোড়া। দিনে বাড়ির কাজের পাশাপাশি ১০/১২ মোড়া সুতা কাটলে ২০ থেকে ২৫ টাকা মজুরী পাই। এই দিয়ে কি চলা যায়।

 

তারা আক্ষেপ করে আরো জানান, পুরুষদের ঠিকই মজুরী দেয়া হয়। আমাদের বেলায় বৈষম্য। কাউকে বলেও লাভ নেই। আর নারীর অধিকার এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়েও তারা কিছু জানেনা বলে জানালেন।

 

 

 

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহাজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজিপুর ও সদর উপজেলার দেড় লক্ষাধিক ইঞ্জিন এবং হস্ত চালিত তাঁতে অন্তত কয়েক লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদিত উন্নত মানের শাড়ি-লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত সহ বহিঃবিশ্বে রপ্তাপি হচ্ছে। এই বস্ত্র তৈরীতে পুরুষরা যেখানে শুধু সুতা রং, শাড়ি বুনন এবং ড্রামে তানা পেছানোর কাজ করলেও নারী শ্রমিকেরা সুতা শুকানো, পাড়ি করা, সুতা কাটা, চড়কা ববিন করা, সেলাই, বুটা কাটা কাজ করছেন। এক্ষেত্রে জেলার তাঁত শ্রমিক নারীরা মুল ভমিকা পালন করলেও তারা দীর্ঘ দিন ধরে সঠিক মজুরী নিয়ে বিরম্বনায় ভুগছেন। পুরুষ শ্রমিকেরও বিষয়টি স্বিকার করলেন অকপটে।

 

 

 

গোপিনাথপুর গ্রামের তাঁত শ্রমিক রেজাউল করিম, হজরত মোল্লা, গোপালপুরের বিশু মিয়া, ওমর আলী জানান, আমরা সারাদিন কাজ করলে ৩/৫ শত টাকা মজুরী পাই। আর নারীরা পায় ১শ টাকা উপরে না। তবে তাদের চেয়ে কিছুটা আমরা ভারী কাজ করে থাকি। সে তুলনায় তাদের অন্তত ২শ টাকা দিন মজুরী হওয়া উচিৎ।

 

খুকনী গ্রামের মিটন কটেজ ইন্ডাষ্ট্রিজের সত্তাধিকারী হাজী শফিকুল ইসলাম, হাজী ফারুক আহমেদ, খামারগ্রামের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত টাঙ্গাইল তাঁত বাজার কারখানার মালিক তোফাজ্জল হোসেন বাবুল জানান, আমাদের তাঁত শিল্পে মুলত নারীরাই প্রধান পৃষ্টপোষক হয়ে শত বছর ধরে কাজ করে আসছেন। তারা মজুরী কম পান মুলত ভারী কাজ না করার জন্য। তবে সবাই কম পাননা। বেশি কাজ করলে বেশী পান। তবে বাজার মন্দার কারনে বর্তমানে তাদের কিছুটা কম মজুরী দিচ্ছি। আবার বাড়লেই বাড়িয়ে দেয়া হবে।

 

একই কথা জানালেন সিরাজগঞ্জ হ্যান্ডলুম পাওয়ারলুম ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাজী বদিউজ্জামান বদি জানান, তাঁত শিল্পে কর্মজীবি নারীদের অবদান বলে শেষ করা যাবেনা। তারা যথাযথ মজুরী পাক সেটা আমি চাই। তবে বাজারের বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। বিদেশে নতুন-নতুন বাজার সৃষ্টি করে এ শি

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর