নববধূর লাশ দেখে পদ্মাপাড়ে বরের আহাজারি
এক দিনের সংসার। একে অপরকে চেনায় হয়নি। হয়েছে কিছু কথা। আরো কথা বাকি, পরে হবে- এমন করেই হয়তো কেটেছে তাদের সংসারের প্রথম রাত। এর মধ্যেই যেন কত আপন হয়ে গেছে দুজন দুজনায়।
পরের দিনে কনের বাবার বাড়ি যাওয়ার ব্যস্ততা। মাছ পথেই দুর্ঘটনা। প্রিয় মানুষটি ফাঁকি দিয়ে নিরুদ্দেশ। এমন সঙ্গীহারা হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী বর আসাদুজ্জামান রুমন। রুমনের মেহেদী রাঙা হাত হয়েছে ধূসর বর্ণের। প্রিয়তমার বাঁধন ছিড়ে যাওয়া স্মৃতি পীড়া দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। তিনদিন পর বধূসাজেই ফিরে এলো প্রিয় মানুষটি। তবে নিথর দেহে।
সোমবার সকালে পদ্মায় বধূসাজেই ভেসে উঠে সুইটি খাতুন পুর্ণি (২০)। হাতে মেহেদি, গায়ে গহনা, পরনে লাল বেনারসি। শুধু দেহটায় নিথর। পদ্মা পাড়ে প্রিয় মানুষের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রুমন।
এর আগে রুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৌকায় উঠার আগে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। আমার ঘাটে আসার আগেই নৌকায় প্রায় সবাই উঠে গেছে। সুইটির ভগ্নিপতি রতন আলী বললো বউরে (সুইটি) কোলে নিয়ে নৌকায় ওঠো। পূর্ণিমা বলে তুমি থাকো, আমি দুলাভাইয়ের কোলে নৌকায় উঠবো। এটাই শেষ কথা তার সঙ্গে।’
রুমন বলেন, ‘কিছু দূর আশার পরে নৌকা ডুবে যাওয়ার সময় আমি কয়েকজনকে রশি বা ধাক্কা দিয়ে নৌকায় তুলে দিয়েছে। এরপরে একজন বললো সুইটিকে ধর। আমি পিছনে তাকিয়ে আর দেখতে পাইনি সুইটিকে।’
গত বৃহস্পতিবার রুমন ও সুইটির বিয়ে হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পদ্মার চরের খানপুর এলাকা থেকে দুইটি নৌকায় করে পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাটের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা। চরখিদিরপুর ও শ্রীরামপুর এলাকার মাঝ পদ্মায় দুইটি নৌকা ডুবে যায়। এতে ছিল ৩৬ যাত্রী।
এর পর যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালায় দমকল, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডাব্লুটিএ ডুবুরি দল। উদ্ধার করা হয় ৯ জনের লাশ। সর্বশেষ উদ্ধার হয় নববধূ সুইটি খাতুন পুর্ণির লাশ। এর পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন জেলা প্রশাসন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, কনে সুইটি খাতুন পুর্ণি, তার বড় বোন শাহীনুর বেগমের স্বামী রতন আলী (৩০), তাঁদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৫), চাচা শামীম হোসেন (৩৫), চাচি মিনা খাতুন (৩০), চাচাতো বোন রশ্নি (৭), খালাতো ভাই এখলাস আলী (২২), কনের ফুপাতো বোন রুরাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১২) ও খালা আঁখি খাতুন (২৫)।
রাজশাহী বার্তা/admin