বদলগাছীতে ভ্রাম্যমান হাঁস পালনে স্বাবলম্বী দিনমজুর মকলেছুর
নওগাঁর বদলগাছীতে ছোট যমুনার চরে ভ্রাম্যমান হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনমজুর মকলেছুর রহমান। তিনি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলা দুবলহাটি গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, বয়লারে কাজ করে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে সংসার চালাতেন মকলেছুর। বয়লারগুলো অটোমেটিক মেশিন চালিত হওয়ায় মালিকরা শ্রমিক ছাটাই করতে থাকে। ফলে তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। এরপর তিনি বাড়িতে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথমে তিনি ১১৭টি হাঁস নিয়ে ২০১০ সালে তার নিজ বাড়িতে হাঁস পালন শুরু করেন। বাড়ির আশে পাশের বিলে হাঁসগুলোকে খাবার খাওয়ানোর জন্য সারাদিন নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সন্ধ্যায় বাড়িতে হাঁসগুলোকে এনে সামান্য ধান খাইয়ে ঘরে তুলতেন। কিছুদিনের মধ্যেই এই হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করে।
প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি ডিম পেতেন তিনি। যা বিক্রি করে খরচ বাদেও প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। প্রথম বছরে ১১৭টি হাঁস থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। পরবর্তীতে এই টাকা এবং এনজিও থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে ৫০০ টি হাঁস কেনেন। কিন্তু হাঁসগুলো রাখার জায়গার অভাব ছিলো তার এবং বিলের খাবার কমে যাওয়ার কারণে তিনি ফেরি করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভ্রাম্যমান ভাবে হাঁস পালন শুরু করেন। বর্তমানে মকলেছুর রহমান বদলগাছীর সদরে ছোট যমুনা নদীর চরে নতুন হাটের জন্য ভরাটকৃত জায়গায় নেট দিয়ে ঘিরে হাঁসের ঘর তৈরি করেছেন।
মকলেছুর রহমান জানান, এখানে ১০১৫টি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে। হাঁসের প্রধান খাবার হলো শামুক ও ঝিনুক। নদীতে পানি কম থাকায় হাঁসগুলো সহজেই নদী থেকে খাবার খেতে পারে। তাই খাবারের জন্য বাড়তি খরচ আমাদের খুব বেশি হয় না। সারাদিন নদীতেই খাবার খায়। শুধু সন্ধ্যাায় হাঁসগুলোকে ঘরে তুলে ধান আর সাথে সামান্য ফিড মিশিয়ে খেতে দিই। ১০১৫ টি হাঁসের জন্য প্রতিদিন ৩মণ ধান ও ঔষধ বাবদ ৫০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন এই হাঁসগুলোর কাছ থেকে ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টি যা থেকে আয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। কয়েকদিনের মধ্যে ডিমের পরিমাণ আরো বেড়ে হবে প্রতিদিন ৭৫০-৮০০ টি। অর্থাৎ প্রতিদিন আয় হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। একটানা ৬ থেকে ৮ মাস ডিম দিবে এই হাঁসগুলি। হ্যাচারির মালিক এখান থেকে ১২ টাকা পিচ হিসেবে ডিম ক্রয় করে নিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, আমার এই খামারে ২ জন কর্মচারী রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে আমি মাসে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দিই। এবং তাদেরকে তিনবেলা খাওয়াতে হয়। ছেলেদের পড়াশুনা করাই। আল্লাহর রহমতে আমার সংসারে এখন আর কোনো অভাব নেই।
মকলেছুরের ছেলে মুমিন হোসেন বলেন, আমি কলেজে লেখাপড়া করি। মাঝে মাঝে বাবাকে সহযোগিতা করি। চাকরির চেয়ে হাঁস চাষ অনেক লাভজনক।
বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমান হাঁস পালন খুবই লাভ জনক একটি ব্যবসা। ভ্রাম্যমান হাঁস পালনে খাবার খরচ খুব কম লাগে। নদী ও বিলের শামুক, ঝিনুক থেকে প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। আর ধানের মাধ্যমে শরর্করা পেয়ে থাকে। তাই শুধু ধান ও ফিড কিনতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ভ্রাম্যমান হাঁস পালনের জন্য আমরা সবসময়ই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। যতরকম চিকিৎসাসেবা আছে আমরা তাদের দিয়ে থাকি এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করি।
রাজশাহী বার্তা/admin