অনিরাপদ যৌ’নমিলনের মাধ্যমে ছড়ায় যে রোগ
যেহেতু যৌ’নসংক্রমণের বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের সচেতনা ও জ্ঞান নেহাতই কম, তাই অনেক যৌ’নরোগ সম্পর্কেই তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। সেই অজ্ঞতার কারণেই কিন্তু রোগ নির্মুল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেকেই মনে করেন এইচ’আইভি-ই একমাত্র যৌ’নরোগ। কিন্তু না, আরো আছে। যেমন, ক্ল্যা’মিডিয়া। চলুন জেনে নিই ক্ল্যা’মিডিয়া কী ও কী তার উপসর্গ। সঙ্গীর শরীরে ক্ল্যা’মিডিয়া বাসা বেঁধেছে কি না সেটাও যেভাবে বোঝা যাবে।
ক্ল্যা’মিডিয়া মূলত জীবাণু। যৌ’নমিলনের কারণে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। মার্কিন দেশগুলোতে অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত। সেখানে প্রতিবছরই ৩০ লক্ষ নারীপুরুষ ক্ল্যা’মিডিয়ায় আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে অন্য দেশেও ছড়াচ্ছে ক্ল্যা’মিডিয়া। ২৫ বছরের নীচে যারা, তারাই আক্রান্ত হয় বেশি।
যেভাবে ছড়ায় : ক্ল্যা’মিডিয়া ছড়ানোর প্রধান রাস্তা হল অনিরাপদ যৌ’নমিলনের মাধ্যমে, তা সে যেই পদ্ধতিতে এবং যে রাস্তাতেই যৌ’নমিলন করা হোক না কেন। অনেক সময় যৌ’নাঙ্গ ক্ল্যা’মিডিয়া আক্রান্ত কারো যৌ’নাঙ্গের সংস্পর্শে আসলেও ক্ল্যা’মিডিয়া ছড়াতে পারে। এমনকি ক্ল্যা’মিডিয়া যৌ’নকার্যে ব্যবহৃত বস্তু দ্বারাও ছড়াতে পারে একজন থেকে আরেকজনে।
যেভাবে বুঝবেন সঙ্গীর ক্ল্যা’মিডিয়া আছে : মূলত নারীরাই ক্ল্যা’মিডিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ৭০-৯৫ শতাংশ নারীর মধ্যে ক্ল্যা’মিডিয়ার কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সত্যি বলতে কী, ক্ল্যা’মিডিয়ার তেমন কোনো উপসর্গই নেই। সংক্রমণের ৫-১০ দিনের মধ্যে বোঝাই যায় না শরীরে এর জীবাণু প্রবেশ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
নারীরা যেভাবে বুঝবেন সে ক্ল্যা’মিডিয়ায় আক্রান্ত :
১. তলপেটে ব্যথা হতে পারে। তবে তলপেটে অনেক কারণেই ব্যথা হয়। পিরিয়েডস্, শরীর কষে গেলে, ইউরিন ইনফেকশন হলেও তলপেটের ব্যথায় ভোগে মহিলারা। সুতরাং, তলপেটে ব্যথা থেকে স্রেফ রোগ অনুমাণ করতে পারেন। নিশ্চিত হওয়ার কোনো জায়গা নেই। ফলে আরো কিছু উপসর্গ জানা দরকার।
২. যৌ’নাঙ্গের হলুদ বা সবুজ নির্গমন।
৩. পিরিয়ডের সঙ্গেই যদি পরিস্রুত র’ক্ত বেরিয়ে আসে।
৪. হালকা জ্বর জ্বর ভাব।
৫. প্রস্রাবের সময় যৌ’নাঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা।
৬. যৌ’নাঙ্গের একেবারে ভিতরে ফুলে যাওয়া।
৭. মলদ্বারে ফোলা ভাব।
৮. বারবার প্রস্রাব হওয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়া।
৯. প্রত্যেকবার মিলিত হলেই যৌ’নাঙ্গের র’ক্তপাত।
১০. গলা দিয়ে তীব্র গন্ধযুক্ত হলদেটে তরল বেরনো।
পুরুষের ক্ল্যা’মিডিয়ায় আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ
১. প্রস্রাবের সময় পুরু’ষাঙ্গে যন্ত্রণা।
২. পুরু’ষাঙ্গ থেকে পুঁজ বেরনো।
৩. টেস্টিকলস্ বা শুক্রাণু ফুলে যাওয়া।
৪. মলদ্বার ফুলে যাওয়া।
পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কিছু কমন উপসর্গ আছে
১. আগেই বলেছি, মলদ্বার ফুলে যায়। সেই সঙ্গে চুলকুনি ও র’ক্তপাত হতে পারে। ডায়ারিয়াও হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
২. ক্ল্যা’মিডিয়া চোখেও আক্রমণ করতে পারে। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। চুলকাতে পারে। চোখ থেকে জল ঝরতে পারে।
৩. গলায় যন্ত্রণা হতে পারে।
চিকিৎসা : এটা জেনে নিশ্চিন্ত হবেন, যে ক্ল্যা’মিডিয়া সহজেই নির্মুল করা যায়। নিয়ম করে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত অ্যান্টিবায়ওটিকও খেতে হবে। ক্ল্যা’মিডিয়া একদিনেও সারতে পারে। আবার ৭দিনও লেগে যেতে পারে।
১. চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ নিয়ম করে খেয়ে যেতে হবে। উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও কিন্তু শরীরে থেকে যেতে পারে রোগের জীবাণু। ফলে যতদিন না জীবাণুরা ধ্বংস হচ্ছে, ওষুধ বন্ধ করা চলবে না।
২. সঙ্গীর সঙ্গে যৌ’নমিলনের করার আগে ফের পরীক্ষা করিয়ে নিন। নিশ্চিত হয়ে নিন সংক্রমণ পুরোপুরি চলে গেছে কিনা।
৩. নিজের ওষুধ অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া ঠিক হবে না।
৪. প্রতি ৩ মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রতিকার : সঙ্গী যদি ক্ল্যা’মিডিয়ায় আক্রন্ত হয় সে পুরোপুরি সেরে না যাওয়া পর্যন্ত যৌ’নমিলন স্থগিত রাখুন। না হলে তার থেকে আপনার শরীরেও ছড়াবে ক্ল্যা’মিডিয়ার জীবাণু। কনড’ম ব্যবহার করতে পারেন। মহিলাদের জন্যেও বিশেষ ধরনের কনড’ম পাওয়া যায়। মিলনের সময় সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।
পরিণাম : এই রোগের চিকিৎসা না করলে প্রজনন অংগ ও সামগ্রিক শারিরীক স্বাস্থ্যের ওপরে অল্পমেয়াদী ও দীর্ঘম্যাদী ভয়াবহ জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এমন মহিলার যৌ’নসংগমের সময় এইচ আই ভির সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা ৫ গুণ বেশি। পুরুষের ক্ষেত্রে তেমন বিশেষ জটিলতা দেখা দেয় না। তবে জজ’নাঙ্গে ও যৌ’নাশয়ে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।
রাজশাহী বার্তা/admin