সামাজিক বা পারিবারিক চাপে পড়ে অযৌক্তিক কারণে বিয়ে করছেন কি?

সময়: 1:09 am - April 16, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 283 বার

জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এই তিনটি বিষয়ই মানুষের জীবনে অজানা থাকে। তবে জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে মানুষ যতটা না ভাবে, বিয়ে নিয়ে তার চেয়েও বেশি ভাবে। আর এই বিয়ে আর বিবাহিত জীবন নিয়ে একেক জনের ভাবনা একেক রকম। কেউ বিয়ে বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবে দেখে আবার কেউ বা নেতিবাচক।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে ব্যাপারটি কারো কাছে প্রকৃতিগত মানসিক, শারীরিক বা সামাজিক চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে একজন পুরুষ ও নারীর সম্পর্কের স্বীকৃত মেলবন্ধন, আবার কারো কাছে শুধুই ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম। কিছু মানুষের ধারণা আবার একদমই ব্যাতিক্রম। তারা মনে করে বিয়ে একটি সমাজ স্বীকৃত পরাধীনতার শৃঙ্খল যা মানুষকে তার অবাধ স্বাধীনতা হরণ করবার মাধ্যমে মানসিকভাবে বন্দী করে ফেলে।

বিয়েটা কারো কাছে যেমন ভয়ের কারণ, আবার কারো কাছে আনন্দের। সবকিছু নির্ভর করছে বিয়ে সম্পর্কটির ব্যাপারে কে কতটা শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্বশীল তার উপর। বিবাহিত জীবন কেমন হবে তা নির্ভর করে স্বামী স্ত্রী উভয়ের উপর। এত কিছুর পরও আমাদের জীবনে বিয়ে একটি অন্যতম অধ্যায়। তবে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টির শুরু করতে সামাজিক বা পারিবারিক চাপে পড়ে কিছু অযৌক্তিক কারণে বিয়ে করছেন না তো?

যে সকল অযৌক্তিক কারণে বিয়ে করা ভুল
সমাজে মানুষের সৃষ্ট কিছু নেগেটিভ পজেটিভ বিতর্কের কারণে বিয়ে ব্যাপারটা আজকাল অনেক ছেলে মেয়েদের কাছে উৎসাহের চেয়ে বেশি আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া পারিবারিক চাপ, আশেপাশের লোকজনদের সমালোচনা আর সামাজিক বিভিন্ন অযৌক্তিক কুসংস্কারতো রয়েছেই। এসব নেগেটিভ চিন্তা মাথায় নিয়ে ছেলে মেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে বসছে বলে, তাদের বিবাহিত জীবনটা ভালোর পরিবর্তে খারাপই হচ্ছে। সুতরাং যেসব ভ্রান্ত ধারণা, ভুল চিন্তাভাবনা, আর যে যে অযৌক্তিক কারণে বিয়ে করা উচিত নয় তা নিয়েই আজ কিছু আলোচনা করবো।

১. পারিবারিক চাপ : বেশিরভাগ ছেলে মেয়েদেরকেই পারিবারিক চাপের মুখে মা বাবাকে খুশি করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না হয়েই বিয়ে করতে হয়। যেটা হয়তো তাদের ব্যক্তি জীবনে সুখকর ফলাফল বয়ে আনে না।

২. কম বয়সী মেয়েদের ভালো বর : প্রায় পরিবারেই কম বয়সী মেয়েদের মা বাবা বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তাদের ধারণা বয়স কম থাকলেই মেয়েদের জন্য ভালো আর প্রতিষ্ঠিত পাত্র পাওয়া যায়। আবার এও ভাবে যে পরে ভালো কোন বিয়ে নাও আসতে পারে। এই চিন্তা করে তারা অল্প বয়সেই মেয়েদের বেশি বয়স্ক ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেন।

আবার ছেলে বা ছেলের পরিবারও ভাবেন যে ঘরে কম বয়সী বউ আনলে তারা বাধ্য আর ভালো বউ হবে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই দেখা যায় বয়সে বিস্তর পার্থক্য থাকার কারণে স্বামী স্ত্রীর উভয়ের মধ্যেই মনের মিল হয় না, একটা দুরত্ব থেকেই যায়।আর এতে করে তারা সংসার জীবনে সুখী হতে পারেনা। আসলে বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স কোন ব্যাপার না। বরং দুজন প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতির বিবাহিত জীবনে বোঝাপড়া ভালো হয় আর তারা ব্যক্তি জীবনে সুখে থাকে।

৩. প্রতিবেশীদের সমালোচনা : মেয়েরা যদি বিয়েটা তাড়াতাড়ি না করে পড়াশুনা আর ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেয়, তখনও দেখা যায় আশেপাশের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশীরা বিভিন্ন সমালোচনা করতে থাকে। বয়স হয়ে গেছে,কেন বিয়ে করছে না, বয়স্ক আর অতি শিক্ষিত মেয়েদের ভালো জামাই পাওয়া যায় না,তারা সংসারী হয় না। এসব অযৌক্তিক সমালোচনা প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া যায়। আর এসব বদ্ধমূল চিন্তা মাথায় নিয়ে ছেলে বা ছেলের পরিবারও বেশি বয়সী মেয়েদের থেকে কম বয়সী মেয়েদের বউ হিসেবে পছন্দ করে।

বেশির ভাগ ছেলেরাই চায় অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে বিয়ে করতে, আর এতে করে অনেকেরই বিয়ে করতে দেরী হয়ে যায়। তখনও তাদের পাড়া-প্রতিবেশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের আর কানাকানির মুখোমুখি হতে হয়। পাড়া প্রতিবেশী কী বলবে সে কথায় কান না দিয়ে নিজেকে যোগ্য বানিয়ে বিয়ে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৪. আবেগের বশবর্তী বা বাহ্যিক সৌন্দর্যে প্রলোভিত হওয়া : অনেক ছেলে মেয়েরা আবেগের বশবর্তী হয়ে আর বাহ্যিক সৌন্দর্যে প্রলোভিত হয়ে কোন কিছু চিন্তা না করেই হুট করে বিয়ে করে ফেলে। অথবা ভুল কোন সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই আবেগ তাড়িত হয়ে বিয়ে করে ফেলে। অতি আবেগের বশে এই ভুল সিদ্ধান্তে ছেলে মেয়ে কেউই ভালো থাকে না। কাজেই আবেগ তাড়িত হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না।

৫. টাকা পয়সা ও বিলাসিতার প্রতি ঝোঁক : অনেক পরিবারেই দেখা যায় টাকা পয়সা ভালো আছে যাদের, সেই পরিবারের পাত্র পাত্রী পেলে অন্যান্য খোঁজ খবর না নিয়েই লোভে পড়ে বিয়ে দিয়ে ফেলে। ছেলে মেয়েরাও বিলাসী জীবন যাপনের চিন্তায় রাজী হয়ে পড়ে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, টাকা পয়সাই জীবনে সুখ এনে দিতে পারে না, যদি পরষ্পরের মধ্যে বোঝাপড়া আর ভালোবাসা না থাকে। বোঝাপড়া, সম্মান আর ভালোবাসা থাকলে কম টাকায়ও সংসার সুন্দর হয়। টাকা পয়সাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে সংসার জীবনে কোনদিন সুখ-শান্তি আসে না।

৬. বন্ধুদের সাথে তুলনা : বন্ধুরা বড় লোক জামাই বা বউ পেয়েছে, তাদের দামী গাড়ি-বাড়ি আছে, অনেক টাকা-পয়সা এসব তুলনা করে চললে নিজেদের জীবনে খারাপ ছাড়া ভালো কোন ফলাফল আসবে না।

৭. বিয়ে মানের জাঁকজমক অনুষ্ঠান : আজকাল প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন রকমের বড় বড় আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। পরিচিত অমুকের বিভিন্ন রকমের আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, কাজেই আমাকেও তেমন কিছুই করতে হবে। বিয়েটা যেন এখন একটি ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়ে গেছে। লোক দেখানো এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো আর সুন্দর একটা জীবনের আশায় বিয়ে করলে বাকী জীবনটা সুখ শান্তিতে কাটানো যায়।

৮. বায়োলজিক্যাল নিড : প্রাপ্ত বয়স্ক হলে নারী পুরুষের মধ্যে শারীরিক চাহিদা তৈরি হয়, যা খুবই সাধারণ ব্যাপার। বৈবাহিক সম্পর্ক সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে শারীরিক সম্পর্কের বৈধতা আনে। কিন্তু যদি শুধু শারীরিক ব্যাপারটা মাথায় রেখে বিয়ে করা হয়, তবে সেটা চরম ভুল হবে। কারণ শারীরিক মোহ দ্রুত কেটে যায় আবার অনেক সময় বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য, কোন দুর্ঘটনায় স্বামী স্ত্রী দুজনেই শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যেতে পারে। কাজেই সম্পর্কের ভালোবাসাটাই মূখ্য। সুতরাং কেবল চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কোনভাবেই নেওয়া উচিত নয়।

পরিশেষে এটুকুই বলবো বিবাহিত কিংবা ভালোবাসা যেকোনো সম্পর্কেই ত্যাগ বা ছাড় দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অযৌক্তিক যত চিন্তা আছে সব দূরে ঠেলে নিজের জীবনটা কে সুন্দর করে সাজাতে সঠিক সময়ে বিয়ে করার সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর