চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবৈধ ‘ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ৭০টি

সময়: 4:54 pm - January 30, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 389 বার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে ৯০ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। এর মধ্যে হালনাগাদ রয়েছে মাত্র ২০টির লাইসেন্স। ফলে ৭০টি ক্লিনিকে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে অবৈধভাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা প্রদানে মানা হচ্ছে না সরকারি নীতিমালা। এমনকি জেলা শহরের আধুনিক সদর হাসপাতালের আশপাশেই রয়েছে ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক।

এদিকে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি লাইসেন্স না থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা জারি করে নোটিশ দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই একের পর এক বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠছে। সদর উপজেলায় বেসরকারি ক্লিনিক ১১ ও ডায়াগনস্টিক রয়েছে ১৯টি। এছাড়াও শিবগঞ্জে ক্লিনিক ১৬ ও ডায়াগনস্টিক ১৮টি, নাচোলে ক্লিনিক ৩ ও ডায়াগনস্টিক ৩টি, গোমস্তাপুরে ক্লিনিক ১১ ও ডায়াগনস্টিক ৬টি, ভোলাহাটে ১টি ক্লিনিক ও ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। জেলায় মোট ৯০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ৭০ টিরই লাইসেন্স নেই কিংবা হালনাগাদ করা হয়নি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের কাছে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন ১৮১ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এর মধ্যে ৭৫টি আবেদনই অসম্পূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করে লাইসেন্সের অপেক্ষায় রয়েছে ৪১টি প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স পেয়েছে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠান।

অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ৩০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মধ্যে আধুনিক সদর হাসপাতালের আশপাশেই রয়েছে ১০টি। যার অধিকাংশই অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মূলত প্রতিষ্ঠান মালিকরা স্বাস্থ্য অধিদফতরে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই অস্ত্রোপচার ও স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যা সরকারি নিয়মবহির্ভূত। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ফি আদায় করা হচ্ছে। একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান ভেদে আদায় করা হচ্ছে একেক ধরনের ফি। এতে চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন রোগী ও স্বজনরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির জন্য ৩৭ ধরনের, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজির জন্য ৪১, বায়োকেমিস্ট্রির জন্য ৪২, হিস্ট্রোপ্যাথলজির জন্য ৩, ড্রাগ অ্যাবিউজের জন্য ৮, থেরাপিউটিক ড্রাগের জন্য ৫ ও ভাইরোলজির জন্য ২৩ ধরনের গ্রহণযোগ্য ফি প্রস্তাব করা হয়। এতে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির ক্ষেত্রে ৮০-৬০০, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজির জন্য ১৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বায়োকেমিস্ট্রির জন্য ১২০-৮০০, হিস্ট্রোপ্যাথলজির জন্য ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০, ড্রাগ অ্যাবিউজের জন্য ৫৫০, থেরাপিউটিক ড্রাগের জন্য ৫০০ ও ভাইরোলজির জন্য ২০০ থেকে ২০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফি গ্রহণের এ নীতিমালা মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জেলা সিভি সার্জন অফিস বলছে, দেখা গেছে যেসব প্রতিষ্ঠান মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের কাছে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন, তার অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ। ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো চিঠি আসেনি। অথচ সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষা না করেই এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, লাইসেন্স না থাকা তিনটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা জারি করে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আরো একাধিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কালো তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। লাইসেন্স না করা পর্যন্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেয়া হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের মালিক ব্যবসায়ী। তারা স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। এ কারণেই কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর