রাজশাহীতে ঢিলেঢালা লকডাউন
ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশ ফেরত মানুষের রাজশাহীতে প্রবেশ থেমে নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে বৃহস্পতিবারও ৩৩জন রাজশাহী জেলায় প্রবেশ করেছেন। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে প্রতিদিন এরচাইতেও বেশি মানুষ নানা পন্থায় রাজশাহীতে প্রবেশ করছে। আর প্রধান প্রধান সড়কগলোতে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও পাড়া-মহল্লার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে করে এই অঞ্চলে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি।
এপর্যন্ত রাজশাহী জেলায় আক্রন্ত ৮ জনের ৭জনই ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ফেরত। আপর জন ফেরি করে কুলা ও পাখা বিক্রেতা ৮০ বছরের বৃদ্ধ সামাজিক ভাবে সংক্রমিত বলে ধারণ করা হচ্ছে। এদিকে রমজানকে সামনে রেখে গেল সপ্তাহ থেকেই বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
রাজশাহীকে নিরাপদ রাখতে এপ্রিল মাসের ৬ তারিখে রাজশাহী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এদিন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ের সমন্বয় সভা শেষে রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজশাহী জেলায় নতুন করে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বা রেব হতে দেয়া হবে না। এমনকি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা করা যাবে না। এসময় তিনি প্রয়োজনে প্রশাসনকে কঠোর হবার পাশাপাশি প্রশাসনকে সহযোগীতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রায় ২০ দিন হতে চলেছে রাজশাহী জেলাকে লকডাউন ঘোষণার; তবে বাস্তব চিত্র উল্টো। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে কোননা কোন ভাবে প্রতিদিন রাজশাহীতে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-গাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশ ফেরতরা প্রবেশ করছেন। জেলা সিভির সার্জনের দেয়া তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার ৩৩ জন রাজশাহীতে প্রবেশ করেছেন। যাদের মধ্যে ২২ জন ঢাকা থেকে, নারায়নগঞ্জ থেকে ৬, মালয়েশিয়া থেকে ১, চট্টগ্রাম থেকে ১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ এবং কুষ্টিয়া থেকে ১ জন ফিরেছেন। একই ভাবে বুধবার ১২, মঙ্গলবার ২৭ ও সোমবার ৩০ জন প্রবেশ করেছেন। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে এরচাইতেও বেশি মানুষ নানা পন্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করছে। রাতের আঁধারে তারা পণ্যবাহী যানবাহনে করে রাজশাহীতে প্রবেশ করছে। আবার অনেকে এ্যম্বুলেন্স ভাড়া করেও রাজশাহীতে প্রবেশ করছেন। এদিকে নগরীর পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন বয়সের মানুষদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি বিধি নিষেধ থাকা সত্বেও ওষুধ, মুদি ও সবজির দোকান ছাড়াও বিভিন্ন দোকান খোলা রয়েছে।
এদিকে কাঁচা বাজার ও টিসিবি পণ্যের বিক্রয় পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিন মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। প্রশাসন এখন পর্যন এই স্থানগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে পাড়ামহল্লার অধিকাংশ বাজারগুলো সপ্তাহের প্রতিদিন খুলে না রেখে, তিনদিন খুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাগরপাড়া ও ভদ্রার বৌবাজার উল্লেখযোগ্য। তবে বাজারগুলো যখন বসছে তখন ক্রেতাদের অসচেতনতায় সামাজি দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভভ হচ্ছে না। এই অবস্থা নিরসনে তিন চাকার ভেনে করে সবজিসহ কাঁচা বাজার বিভিন্ন বাসাবাড়ির সামনে ভ্রাম্যমান পন্থায় বিক্রিতে জোড় দিতে মত দিয়েছেন অনেকেই।
মসজিদগুলোতে শিশুদের পাশাপাশি ষাটউর্ধ্ব বৃদ্ধদের না যেতে পরামর্শ দেয়া হলেও দেখা গেছে মিসজিদগুলোতে বৃদ্ধদের উপস্থিতিই তুলানামূলক বেশি। মসজিদগুলোতে শুক্রবার ৭ জনের উপস্থিতিতে নামাজের কথা বলা হলেও, মসজিদ কমিটির পছন্দ মতো মানুষ মসজিদগুলোতে প্রবেশ করতে পারছেন। যে আগে আসছেন অনেক সমজিদে তাকে প্রবেশ করতে না দিয়ে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন সড়ক ও বাজারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল জোরদার করেছে। এমনকি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অসহায় দরিদ্র বয়স্কদের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী যখন যে এলাকায় টহল জোড়দার করছে তখন সেই এলাকা মানুষ ভয়ে হলেও সতর্ক হচ্ছেন। তবে সেনাবাহিনী চলে গেলে আবারো ওই সকল এলাকায় জনসমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজশাহী বার্তা/admin