বগুড়ায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ
বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যা দুর্গত মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে। আক্রান্তদের অনেকে গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিয়ে আশপাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রায়ন প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বোহাইল, কর্ণিবাড়ি, কাজলা ও চালুয়াবাড়ি সম্পূর্ণ এবং সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, চন্দনবাইশা ও কামালপুর আংশিক প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৬৮ গ্রামের ১২ হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের ৩৫ হাজার ৩৯০ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের ৪ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমির পাট, ১ হাজার ৯২০ হেক্টর আউশ ধান ক্ষেত, ৫০ হেক্টর সবজি, ৬০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ২ হেক্টর মরিচ ও ১৫ হেক্টর ভুট্টার ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী, কাজলার চেয়ারম্যান রাশেদ মোশাররফ ও বোহাইলের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ জানান, যমুনা তীরবর্তী অন্তত ৮০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা দুর্গতরা আশপাশের আশ্রয়ন প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক এলাকায় ত্রাণ পৌঁছেনি। গবাদিপশুসহ আশ্রয় নেয়া এ সব মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ঘুঘুমারী গ্রামের আজিতুল্লাহ শেখের ছেলে মোতাহার শেখ জানান, বন্যা শুরুর পর গত ১০ দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চন্দনবাইশা অশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত তারা ত্রাণ পাননি। দুপুরে তারা শুধু কাঁঠাল রান্না করে খেয়েছেন। চন্দনবাইশা গ্রোয়েনে আশ্রয় নিয়ে আরও অন্তত ৫০০ মানুষ ত্রাণের আশায় রয়েছেন।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, বুধবার বেলা ১২টার দিকে যমুনা নদীর সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া জানান, মঙ্গলবার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের সুজানেরপাড়া আশ্রায়ন প্রকল্পে ৪০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকাতেও ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।
এ দিকে সোনাতলা উপজেলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গত কয়েকদিনে তেকানীচুকাইনগর, পাকুল্লা ও মধুপুর ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে তাদের বাড়িঘর ভেঙে গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন মানুষরা বন্যাকবলিত হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার জৈন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ২০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও নগদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে।
রাজশাহী বার্তা/admin