নাটোরে স্বেচ্ছাশ্রমে একশ’ ফুট সাঁকো নির্মাণ করলেন গ্রামবাসী
স্থানীয় লোকজন অনেক দিন ধরে বিভিন্ন দফতরে ধর্ণা দেয়ার পরও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশী-প্রতাপপুর রহিমের মোড়ে ডাঙ্গা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয়নি। অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে প্রায় একশ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো নির্মাণ করেছেন নদীর পাশের দুই গ্রামের বাসিন্দারা। এতে কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা আর কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম- এভাবেই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন। এ বাঁশের সাঁকোটি হওয়ায় দ্বারিকুশী ও প্রতাপপুর ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলের পথ উন্মুক্ত হল।
জানা যায়, দ্বারিকুশী ও প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দারা এ পথে নিয়মিত চলাচল করেন। এ পথে গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রতাপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকুশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকুশী-প্রতাপপুর হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। গ্রামের বাসিন্দারা দ্বারিকুশী ও জোনাইল বাজারে কেনাবেচা করতে যান। কিন্তু এখানে সেতু না থাকায় তারা বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলার ভেলা বা একটি বাঁশের সঙ্গে আরেকটি বাঁশ বেঁধে তৈরি বাঁশের সাঁকো (আড়) দিয়ে নদী পারাপার হন। এতে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে না পারার পাশাপাশি চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন দফতরে যোগাযোগ করেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে গ্রামের লোকজন নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় শতাধিক লোক নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন। সাঁকো নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেখানে যেন উৎসব চলছে। তাদের কেউ কেউ কেউ বাঁশ কাটছেন। আর কেউ বা তাল গাছের ফাড়াই করা কাঠের তক্তাগুলো চেঁছে সমান করে দিচ্ছেন। আর কেউ পানিতে নেমে বাঁশের খুঁটির উপর তালের তক্তায় পেরেক মেরে তিন ফুট প্রস্থ ও একশ’ ফুট দীর্ঘ বিশিষ্ট সাঁকো নির্মাণ করছেন। আর বয়স্করা বসে থেকে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আরেক পাশে সবার জন্য চলছে রান্নার আয়োজন।
প্রতাপপুর গ্রামের সাবান মণ্ডল জানান, আমাদের ছেলেমেয়েরা নদীর ওপারের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। কলার ভেলায় বা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে তাদের যেতে হয়। এতে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কায় থাকতে হয়। তাই গ্রামের লোকজন সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন।
দ্বারিকুশী গ্রামের আব্দুর রহিম মণ্ডল বলেন, এখানে একটি সেতুর জন্য বিভিন্নজনের কাছে ঘুরেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। আপাতত সাঁকোটি নির্মাণ করে চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রাখা হচ্ছে। তবে এখানে সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, এখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রাজশাহী বার্তা/admin