বারে মদ খেয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রমৈত্রী নেতার লঙ্কাকাণ্ড, অতঃপর…

সময়: 7:36 pm - February 19, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 141 বার

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পর্যটন মোটেলের বার ভাংচুর করেছেন।

 

ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে একটি মহল। তবে বুধবার দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে জানাজানি হয়।

 

এ অভিযোগে এ দুই নেতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার বিকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

 

মাতাল হয়ে ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতির নাম জনি (৩০)। তার বাবার নাম একতার হোসেন। বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়।

 

অপরদিকে মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতির নাম জুয়েল (২৮)। তার বাবার নাম মোসলেম উদ্দিন। তার বাড়ি মহানগরীর নগরের উপরভদ্রা এলাকায়।

 

এ ঘটনায় এ দুই ছাত্রনেতার দুই সহযোগীকেও ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- জসিম (২৩) ও তারেক (২২)।

 

জসিমের বাবার নাম আবদুল হামিদ এবং তারেকের বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। তাদের দু’জনের বাড়িই মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় রাজশাহী পর্যটন মোটেলে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জনি এবং মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জুয়েল মদপান করতে যান।

 

বারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগ নেতার মদপানের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের দেয়া কোনো লাইসেন্স নেই। তবে ছাত্রমৈত্রীর নেতার লাইসেন্স রয়েছে। এক লাইসেন্সে দুই দলের দুই নেতা মদপান করেন। এরপর তারা মাতাল হয়ে অপর এক খদ্দেরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

 

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় বারের কর্মচারীরা তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন।

 

এ সুযোগে ওই খদ্দের বার থেকে চলে যান। তখন এ দুই নেতা মোটরসাইকেল নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন। কিন্তু ধরতে না পেরে তারা বারের কর্মচারীদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হন।

 

এ সময় ওই দুই নেতা বলেন, বারের কর্মচারীদের কারণেই বাইরের লোকেরা তাদের মুখের ওপর কথা বলে চলে যেতে পেরেছেন। এরপর ওই দুই নেতা ক্ষোভে বারের কর্মচারীদের ওপরে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে তারাও সরে পড়েন।

 

তখন এ নেতারা ফোন করে আরও ১০-১২ জন কর্মীকে ডেকে আনেন। তারা এসে একযোগে বারের দরজা জানালা ও মদপানের গ্লাস ভাংচুর করতে শুরু করেন।

 

বিপদ বুঝতে পেরে বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক নিকটবর্তী রাজপাড়া থানায় ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ ফোন ধরতে দেরি করায় তিনি সরাসরি রাজপাড়া থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসেন।

 

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুই নেতাসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

 

এ ঘটনায় বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ওই থানায় দুইটি মামলা করেন। একটি মামলা মদপান করে মাতলামি করার অভিযোগে মাদকদ্রব্য আইনে এবং অপরটি ভাংচুর করার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, জনি তাদের সহসভাপতি। এর আগেও তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে।

 

ছাত্রমৈত্রীর মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, ছাত্রমৈত্রীর মহানগর শাখার সভাপতির মাতলামির ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এটা জাতির জন্যও দুঃখজনক।

 

লাইসেন্স ছাড়াই ছাত্রলীগের নেতা কীভাবে মদপান করলেন জানতে চাইলে বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, লাইসেন্সধারী একজন আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে মদপান করতে পারেন।

 

তবে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, বারে গিয়ে মদপান করতে হলে প্রত্যেকেরই ‘পারমিট’ থাকতে হবে।

 

এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান জানান, তারা দুই নেতার পরিচয় জানতে পেরেছেন। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে পারেননি। দুইটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর