চারঘাটে ত্রাণ চাইতে গিয়ে ইউপি সদস্যের লোকজনের হাতে মার খেলেন বৃদ্ধা, পাশে দাঁড়ালেন ডিসি -এসপি
রাজশাহীর চারঘাটে খাবারের অভাবে সরকারী ত্রাণের জন্য সহায়তা পেতে ইউপি সদস্য নৈয়ব আলীর কাছে গিয়ে তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হয়েছেন স্বামী পরিত্যাক্তা রেজিনা নামের এক বৃদ্ধা নারী।
ত্রাণের কার্ড চাওয়ায় ইউপি সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নাজমুল হক ও তার শ্যালক বজলু ওই নারীকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এ সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নারী মালেকা বেগম তার স্বামীকে সহায়তা করেন বলেও জানা গেছে। এতে ওই নারী গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধা বাদী হয়ে চারঘাট থানায় এজাহারনামীয় ১০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ১ নং আসামী মালেকা আটক হলেও বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
সেই মামলায় ইউপি সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বজলুর স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত ওই নারীর নাম মালেকা বেগম (৩৫)। বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার সকালে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই বৃদ্ধা নারীকে দেখতে যান রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। আর মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ওই নারীকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও নারীকে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে এবং ওই নারী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর যাতে খাদ্য অভাবে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চারঘাট ইউনিয়ন পরিষদের আ’লীগ সমর্থিত ৮ নং ইউপি সদস্য নৈয়ব আলীর কাছে অভাবের তাড়নায় খাদ্য অভাবে পড়া বৃদ্ধা রেজিনা ত্রাণের কার্ডের জন্য যান। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার মধ্যে কোন অসহায় ও যে কোন মানুষ যাতে খাদ্য না খেয়ে না থাকে এমন নির্দেশনা দিলেও উল্টো চিত্র দেখা যায় এই ইউপি সদস্য নৈয়ব আলীর বেলায়। তিনি একজন ইউপি সদস্য হয়েও এই বৃদ্ধার কথা গুরুত্ব সহকারে না শুনে তার অনুগত ও ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নাজমুল এর কাছে যেতে বলেন। ওই নারী নিজের অভাবের কথা বলে সাহায্যের ব্যবস্থা করতে বললেও ইউপি সদস্য তার কথা না শোনে নাজমুল এর কাছে যেতে বলেন।
ইউপি সদস্যের কথায় ওই নারী নিজের ত্রাণ কার্ডের জন্য তার ঘনিষ্ঠজন নাজমুল এর কাছে যায়। নাজমুল এর কাছে গেলে নাজমুল বলে তোমার নাম নাই তোমাকে ত্রাণ দেয়া হবেনা তুমি চলে যাও। এ সময় ওই বৃদ্ধা প্রতিবাদ করলে নাজমুল ও তার শ্যালক বজলু ওই নারীকে মারধর শুরু করে। এ সময় মামলার প্রধান আসামি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মালেকা বেগম তাদের বৃদ্ধাকে মারধর করতে সহযোগিতা করে। তাদের অসহ্য মারধরে ওই নারী চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ইউপি সদস্য ও তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও অন্যান্য মানুষজন। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
এরপর বিষয়টি রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ এর কানে আসলে তিনি চারঘাট থানার ওসি কে বিষয়টি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং ওই নারীকে খাদ্য সামগ্রী দেন। মামলার আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেন। যাতে ঘটনার সাথে জড়িত কেউ ছাড় না পায়। পুলিশ সুপারের এমন নির্দেশনার পর পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে মালেকা নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে। আর রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বিষয়টি জানতে পেরে স্বশরীরে বুধবার সকালে তিনি চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাহায্য চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়া নারীকে দেখতে যান। এরপর ওই নারীকে খাদ্য সহায়তা দেন এবং ওই নারী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর যাতে
কোন খাদ্য অভাবে না পড়ে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর ইফতেখায়ের আলম বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই পুলিশ সুপার ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ও অসহায় বৃদ্ধা নারীকে খাদ্য সহায়তা দেন। এ বিষয়টি তিনি নিজেই সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। বুধবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, খবর পেয়ে বুধবার সকালে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। যারাই ঘটিয়ে থাকুক এটা ঠিক হয়নি। আমি চিকিৎসাধীন নারীর সাথে দেখা করে তাকে খাদ্য সামগ্রী
ও বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর যাতে তার খাদ্য কষ্ট না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ সময় জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশ্ন করা হয় যে একজন ইউপি সদস্য খুব কম এলাকা নিয়ে তার পরিধি তিনি নিজেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখে তার লোকের কাছে যেতে বলেছে এটি তার গাফিলতির মধ্যে পড়ে কিনা আর যদি গাফিলতি য় তাহলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মারধরের সময় ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে শুনে। তবে তদন্তে যদি তার গাফিলতি ধরা পড়ে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।