ঘুরে আসুন রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান

সময়: 1:45 pm - May 23, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 622 বার

সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই রেশম উৎপাদন, ভারতের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পদ্মানদীর তীরবর্তী হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার কারণে ইংরেজ বণিকদের কাছে রাজশাহী শহর ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। রাজশাহীকে বলা হয় শান্তির নগরী, শিক্ষানগরী ও রেশমনগরী। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের এটি সবথেকে বড় শহর। রাজশাহী তার আকর্ষণীয় রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু ও মিষ্টাণ্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ। রেশমবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশমনগরী নামে ডাকা হয়।

সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই শহরের নাম লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রেশম ছিল এর মূল কারণ। রেশম উৎপাদন, ভারতের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পদ্মানদীর তীরবর্তী হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার কারণে ইংরেজ বণিকদের কাছে শহরটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ফলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে রাজশাহী গুরত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আপনার ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাজশাহী হতে পারে চমৎকার একটি জায়গা।

ভ্রমণের জন্য উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ-

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর : রাজশাহী ভ্রমণের শুরুতেই দেখে দিন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা মিলবে। রাজশাহী সদর হাপতালের সামনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯৬৪ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের দায়িত্ব বর্তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। আটটি গ্যালারিতে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি, দুই হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, প্রায় এক হাজার পোড়ামাটির ফলক ছাড়াও হাজারো নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এই জাদুঘরে।

এপ্রিল থেকে অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নভেম্বর থেকে মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে।

পদ্মার তীর : শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। যেসময়ই হোক না কেন, পদ্মারতীর আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃদু-মন্দ বাতাসের সাথে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এছাড়াও পদ্মার বুকে নৌকা ভ্রমণ ও বিজিবি কর্তৃক পরিচালিত স্পিডবোট রাইডিং উপভোগ করতে পারবেন।

হযরত শাহমুখদুম (র.) মাজার : রাজশাহী কলেজের কাছে দরগা পাড়ায় পদ্মার তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা দরগাপাড়ায় অবস্থিত মাজারটি রাজশাহীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই অঞ্চলের দরবেশ পুরুষ শাহ মখদুমের (র.) সমাধি। ১২৮৭ সালে তিনি বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে আসেন। ১৩১৩ সালে চিরকুমার এই দরবেশ মৃত্যুবরণ করেন। আর ১০ মহররম এখান থেকে বের হয় তাজিয়া মিছিল।

কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা : পদ্মার তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। অনেক দেশি-বিদেশি পশু-পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ বাচ্চাদের জন্য রাইডিং, হেলিপ্যাড ও ছোট পাহাড় নিয়ে অবস্থিত।

টি বাঁধ : রাজশাহী শহরের পাশে পদ্মার তীরে ইংরেজি “টি” আকৃতির বাঁধ এখন শহরের অন্যতম বেড়ানোর জায়গা। পদ্মার শীতল বাতাসের পরশ নিতে প্রতিদিন বহু মানুষ এখানে জড়োহন। এখান থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন পদ্মার কোনো চর।

বিসিক শিল্প এলাকা : শহরের বিসিক শিল্প এলাকায় আছে বেশ কিছু রেশম শিল্প। পোকা থেকে রেশম তৈরির কলাকৌশল দেখতে পাবেন এখানে। তুলনামুলক কম দামে এখান থেকে রেশমের কাপড়ও কেনা যায়।

স্মৃতি অম্লান : শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়কের ভদ্রা এলাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিসৌধ। রাজশাহীর কেন্দ্রস্থলে নির্মিত ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। স্থপতি রাজিউদ্দিন আহমদ। সৌধে মোট তিনটি স্তম্ভ আছে। প্রতিটির গায়ে ২৪টি করে ধাপ। যেগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আন্দোলনের ক্রমবিবর্তন ও স্বাধীনতার ফসল। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের নির্দেশ করা হয়েছে স্তম্ভের গায়ের ৩০টি ছিদ্রের মাধ্যমে। প্রতিটি স্তম্ভে রয়েছে ১০টি করে ছিদ্র। বেদিমূলে রাখা আছে নীল শুভ্রপাথরের আচ্ছাদন। যা দুই লাখ নির্যাতিত নারীর বেদনাময় আর্তির কথা ইঙ্গিত করে। সৌধের চূড়ায় রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রের লালগোলক। যা স্বাধীনতা যুদ্ধের উদীয়মান লাল সূর্যের প্রতীক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস : রাজশাহী শহরের পাশে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। এর ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ : মেডিকেল স্থাপিত হয় ১৯৫৮ইং সালে বাংলাদেশে ৬টি মেডিকেল কলেজ বৃটিশ স্বীকৃত এরমধ্যে অন্যতম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) : শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘেষা রুয়েট সুবিসাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত। রুয়েট স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে।

কাশিয়া ডাঙা : এখান থেকে শুরু করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে সুবিস্তৃত আমবাগান।

বাঘা মসজিদ : পঞ্চাশ টাকার নোটে যে মসজিদটি দেখতে পান সেটিই হলো রাজশাহীর ঐহিত্যবাহী বাঘা মসজিদ। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০কি.মি. পুর্বে অবস্থিত।

পুঠিয়া রাজবাড়ী : রাজশাহী শহর থেকে ৩০কি.মি. পুর্বে অবস্থিত পুঠিয়ায় গেলে দেখতে পাবেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শিবমন্দীরসহ অসংখ্য পুরাকীর্তি।

সারদা পুলিশ একাডেমি : রাজশাহী থেকে ৩০ কি.মি. দূরে পদ্মার তীরবর্তী সারদায় রযেছে পুলিশ প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

যেভাবে যাবেন : আকাশপথ, রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথে রাজশাহীতে যেতে পারেন।

আকাশপথ: শাহমুখদুম বিমানবন্দর। রাজশাহী শহরের নিকটবর্তী নওহাটায় অবস্থিত বিমানবন্দরটি রাজধানী ঢাকার সাথে রাজশাহীকে আকাশ পথে যুক্ত করেছে।

সড়কপথ: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় প্রতি আধঘণ্টায় একটি করে বাস ছাড়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাস সার্ভিসগুলোর অন্যতম: ১. হানিফ এন্টারপ্রাইজ ২. ন্যাশনাল ট্রাভেলস ৩. দেশ ট্রাভেলস ৪. শ্যামলী পরিবহন ৫. গ্রামীন ট্রাভেলস।ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। নরমাল বাস ভাড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা।

রেলপথ: সিল্ক সিটি, ধূমকেতু ও পদ্মা এক্সপ্রেস, রেলপথে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবার অন্যতম আধুনিক আন্ত:নগর রেল ব্যবস্থা। সিল্কসিটি ঢাকা থেকে দুপুর ২.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে সকাল ৭.৩৫ মিনিটে।

থাকবেন কোথায় : এই শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাওয়া যাবে। অন্যতম হোটেলগুলো হল: রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেববাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাহেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস্ ইন, লক্ষীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেব বাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর