পরীক্ষার্থী সেজে জামিন চেয়ে ধরা রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা
পরীক্ষার্থী দেখিয়ে জামিন চেয়ে ধরা পড়েছেন চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান নাঈম। আদালতে তার দাখিল করা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাগজপত্র ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।
ফলে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থবর্ষের পরীক্ষায় বসা হয়নি নাঈমের। তাকে পরীক্ষার্থী দেখিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকীন হাবীব বাপ্পীর আদালতে জামিন আবেদন করা হয়।
এরপর ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী কেন্দ্রিয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ তার পরীক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র রাজশাহী কলেজে যাচাই-বাছাইয়ে পাঠালে ধরা পড়ে জালিয়াতির ঘটনা।
আদালতে দাখিলকৃত নথিতে নাঈমকে রাজশাহী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনার্স চতুর্থবর্ষের পরীক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। তার পরীক্ষার কেন্দ্র (২০৮) সরকারি সিটি কলেজ। তার রোল নম্বর- ৬১৯৯০৫৮, নিবন্ধন নম্বর-১২১৩২৩২৯৫৬২ এবং শিক্ষাবর্ষ ২০১৩-২০১৪।
কিন্তু আদালতে দাখিলকৃত রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা যায়, এই নথিপত্র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলামের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম নাঈমের অনুসারী। কলেজ ছাত্রাবাসের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল-ব্লক নিয়ন্ত্রণ করেন রাশেদুল। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়ানোর অভিযোগ।
রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের রেকর্ড অনুযায়ী, নাইমুল হাসান নাঈমের প্রকৃত নাম মো. নাইমুল হাসান। তিনি কলেজের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স প্রথমবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন নাঈম। প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষ সম্পন্ন করার পর তিনি অনিয়মিত হয়ে পড়েন। পরে তার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
তবে বিশেষ বিবেচনায় তাকে শেষবারের মতো ২০১৮ সালের অনার্স তৃতীয়বর্ষ (বিশেষ) পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেইবার তিনি অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ফরম পূরণ করেন। কিন্তু এই পরীক্ষার সমময়সূচী এখনো নির্ধারণ হয়নি।
জানতে চাইলে রাজশাহীর সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিজ্ঞ আদালতের প্রেরিত পত্রের আদেশে নাইমুল হাসানকে ২০১৯ সালের চতুর্থবর্ষ অনার্স পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারাগারে তার পরীক্ষা নেয়ার আদেশ পেয়ে রেজিস্ট্রেশন কাড ও প্রবেশপত্র যাচাইয়ের জন্য কলেজ এবং কেন্দ্র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। তিনি বলেন, কারাগার থেকে তার যেসব কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে সেগুলো ভুয়া। কারণ নাঈম তৃতীয়বর্ষের পরীক্ষার্থী। আর আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রে তাকে চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন কেন্দ্র সচিব ও রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সানাউল্লাহ শেখ।
রাজশাহী বার্তা/admin