সরকারি আজিজুল হক কলেজ

সময়: 3:16 pm - April 21, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 531 বার

বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত। এটি বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ইতিহাস : ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল বগুড়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খাঁন বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি এবং মৌলভী আব্দুস সাত্তারকে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কলেজটি ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবিভক্ত বঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্যার আজিজুল হক এর নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ছিলেন; সরকারি স্কুলে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী থেকে বাংলায় চালু, প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনাকে অ্যাক্টে পরিণত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠা (১৯৪০), শিক্ষা সপ্তাহ পালন কর্মসূচী প্রবর্তন, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার মহাজনী বিল ও প্রজাস্বত্ব আইন উপস্থাপন তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি।কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ড. এম.এম. মুখার্জি (আগষ্ট ১৯৩৯- সেপ্টেম্বর ১৯৩৯) এবং প্রথম উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এস.পি সেন। কলেজের যাত্রা শুরুর প্রায় দুই বছর পর্যন্ত কলেজের ক্লাস অস্থায়ীভাবে সুবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমান) নেয়া হয়। পরবর্তীতে এটি ফুলবাড়ি বটতলাতে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারীকরন করা হয়।

কলেজ : কলেজের যাত্রার শুরুতে কেবলমাত্র আই-এ শ্রেণী চালুর অনুমতি পায়। শুরুতে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী ছিল কোন ছাত্রী ছিল না। প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া তারা হলেন মোজাম পাইকার, আমীর আলী, শফিকুর রহমান, আব্দুল মালেক নূরুল ইসলাম ভোলা প্রমুখ।’’ ১৯৪১ সালে কলেজের প্রথম ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ১৫২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০৭ জন পরীক্ষায় পাশ করে। এর মধ্যে প্রথম বিভাগে ০৮ জন, দ্বিতীয় বিভাগে ৬৪ জন এবং তৃতীয় বিভাগে ৩৫ জন পাশ করে। পাশের হার ছিল ৬৯.২%। অথচ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হার ছিল ৬৩.৪%।

প্রতিষ্ঠালগ্নে আই.এ. শ্রেণীতে বংলা (সাধারণ), বাংলা (২য় ভাষা), ইংরেজী (আবশ্যিক), ইংরেজী (অতিরিক্ত), ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, যুক্তিবিদ্যা, পৌরনীতি, সাধারণ গণিত, আরবী/ ফার্সী বিষয়গুলো পড়ানোর অনুমতি পেয়েছিল। সেসময় যারা কলেজের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন ইংরেজী- শ্রী কে. সি. চক্রবর্ত্তী, সংস্কৃত ও বংলা- শ্রী প্রভাত চন্দ্র সেন এম.এ.বি.টি, আরবী ও ফার্সী- মোঃ আব্দুল গফুর, গণিত- শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র চাকী এম.এ, ইতিহাস- শ্রী এস.পি সেন বি.এ (সম্মান) লন্ডন, যুক্তিবিদ্যা- মোঃ ফজলুর রহমান এম.এ, পৌরনীতি- মোঃ আকবর কবির এম.এ। প্রতিষ্ঠাকালে কলেজে ছাত্রী ছিলনা, এটা সত্য হলেও ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। জানা যায় ১৯৪৩ সাল থেকে কলেজে ছাত্রী ভর্তি শুরু হয় এবং এই সংখ্যা ছিল ৮ থেকে ১২ জন।

পরবর্তীতে এই সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পায়। এরপর ১৯৫৩ সাল পর্যমত্ম ছাত্রীরা সকালের শিফ্টে বর্তমান ভি.এম গার্লস স্কুলে ক্লাশ করত। ঐ বৎসরই কলেজে সহ শিক্ষা চালু হলে এই প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটে, উজ্জীবিত হয় শিক্ষার মহৎ ও মানবিক উদ্দেশ্য, এতদিন যা সম্প্রদায়িকতার রোষানলে পরে পদদলিত হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠার মাত্র ২ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪১ সালে কলেজে, অর্থনীতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে দু’বছর মেয়াদী সম্মান শ্রেণী ও বি.এ পাস কোর্স চালুর অনুমতি লাভ করে। ড. কে. এম ইয়াকুব আলীর মতে, ‘তদানীমত্মন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এটিই প্রথম কলেজ যেখানে সেসময় সম্মান শ্রেণী চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।’ কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতা ও অন্যান্য অসুবিধার কারনে কলেজ পরিচালনা কমিটি শুধুমাত্র ইসলামের ইতিহাস বিভাগে সম্মান এবং বি.এ পাস কোর্স চালু করেন।

এরপর ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষ হতে কলেজটি বংলা এবং আরবী বিভাগে সম্মান ও আই.কম শ্রেণী চালুর অনুমতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে কলেজটি আইনতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হয়ে পরে। প্রশাসনিক জটিলতার অজুহাতে সেসময় কলেজে সম্মান শ্রেণী পরিত্যাক্ত হয়, এবং আই.এস.সি. শ্রেণী (পদার্থ, রসায়ন, অংক) চালুর অনুমতি পায়। আই.এস.সি. শ্রেণীতে বায়োলজি বিষয় অমত্মর্ভূক্ত হয় ১৯৪৮-৪৯ শিক্ষাবর্ষে।

এর কিছুকাল পরে ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হয় এবং আরবী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে তিন বছর মেয়াদী সম্মান শ্রেণী চালু করা হয়। সরকাররিকরনের পর কলেজে বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে সম্মান পড়ানোর পাশাপাশি বি.এ,বি.কম, বি.এস.সি, আই.এ, আই.কম, আই.এস.সি চালু হয়। ১৯৭২-৭৩ সালে সম্মান কোর্সে বাংলা, ইহিতাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আরবি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গণিত ও হিসাববিজ্ঞান চালু হয়। মাস্টার্স কোর্স অর্থনীতি, রাষ্ঠ্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান চালু করা হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে মাস্টার্স ও সম্মানে যথাক্রমে ৩১৭ ও ৬১৮ সহ মোট ৩,৭৮৭ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। শিক্ষক ছিলেন ৯০ জন।

বিভাগ সমূহ:

বিজ্ঞান অনুষদঃ পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, গনিত বিভাগ, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
পরিসংখ্যা বিভাগ, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ।

কলা অনুষদঃ বাংলা বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ইসলামি শিক্ষা বিভাগ, আরবি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, দর্শন বিভাগ, ইসলামী ইতিহাস।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঃ অর্থনীতি বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সমাজকর্ম বিভাগ।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদঃ হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, ফিন্যান্স বিভাগ।

অবকাঠামো : কলেজের পুরাতন ক্যাম্পাসে ৯টি শ্রেণী কক্ষ, ৪টি গবেষণাগার, ১টি গ্রন্থাগার, অফিস, ছাত্র-ছাত্রী বিশ্রামাগার, বি,এন,সি,সি ভবন, দ্বিতল মসজিদসহ ৫টি ভবন রয়েছে।
নতুন ক্যাম্পাসে ১টি ত্রিতল বিশিষ্ট কলা ভবন, ১টি ৪তলা বিজ্ঞান ভবন, ১টি ত্রিতল কমার্স ভবন এবং ১টি দ্বিতল গ্রন্থাগার রয়েছে। ১টি দ্বিতল অধ্যক্ষ ভবন, ১টি ছাত্র সংসদ ভবন, ১টি দ্বিতল মসজিদ, ১টি রোভার্স স্কাউট ভবন, একটি শহীদ মিনার এবং ১টি খেলার মাঠ রয়েছে। শ্রেনীকক্ষ- ৭১, লাইবেরীকক্ষ -৭, গবেষনাগার-১৮

ছাত্রাবাস : কলেজের নতুন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য * তিতুমীর হল, * শের-ই-বাংলা হল ও * শহীদ আকতার আলীমুন হল নামে ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল নামে ১টি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া পুরাতন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য ফখরুদ্দিন আহমদ হল নামে একটি হল রয়েছে।

লাইব্রেরী : এখানে প্রায় ২২,০০০ পুস্তক সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার রয়েছে। কলেজে ১৯৬৮ সালে প্রায় ২,৫০০ আসন বিশিষ্ঠ একটি বৃহৎ অডিটোরিয়ম নির্মাণ করা হয়।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর