ভিন্ন স্বাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসকালায়ের রুটি
রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর। সন্ধ্যায় জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে নূরানি মসজিদের নিচে বসে চা খাচ্ছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল। হঠাৎ একটা ঘ্রাণ নাকে এসে পৌঁছায়। ঘ্রাণটা আড্ডায় বেশ অমনোযোগী করে তোলে। খুব পরিচিত ঘ্রাণ। চালের আর মাসকালায়ের আটার গন্ধ। এটা দিয়ে কি সুস্বাদু খাবার হয় তা আমার জানা। খাবারের নামটা হলো ‘মাসকালায়ের রুটি’। রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে এই খাবারের খোঁজ পাই। স্থানীয় ভাষায় এটাকে ‘লাহারি’ বলে। এটা বানানোর পদ্ধতিটাও খুব দারুণ। আস্ত একটা রুটি হাতেই তৈরি করেন স্থানীয় মানুষরা।
আড্ডায় আর মন রাখতে পারলাম না। আড্ডা ছেড়ে গন্ধের উৎস অনুসন্ধানে বের হলাম। কোথা থেকে এই ঘ্রাণ আসছে। কিছুদূর যেতেই দেখলাম কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজ নামে একটা দোকানে দুইজন মানুষ চার চুলায় সমান তালে মাসকালায়ের রুটি বানাচ্ছেন। এক হাত থেকে অপর হাতের চাপ দিয়ে বানাচ্ছেন রুটি ।
দোকানের সামনে লোকজনের ভিড়। সবাই মশগুল হয়ে দেখছেন হাত দিয়ে কিভাবে রুটি বানায়। কেউ কেউ বলাবলি করছেন, এটা খুব উপকারী। একটা রুটি খাইলেই হয়। একবেলা আর কিছু খাওয়া লাগে না।
আরো পড়ুন : চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার
জানতে পারলাম, দোকানের মালিক ও রুটির কারিগর সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। দোকানের মালিক শ্যামল রহমান বলেন, আমি বিবিএ শেষ করে কিছুদিন চাকরি করেছি। কিন্তু চাকরি আমার ভালো লাগে না। তাই প্রথমে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করি। রেস্টুরেন্টের ব্যবসার এক পর্যাযে মনে হলো ব্যতিক্রম কিছু করি। তাই নিজের এলাকার মাসকালায়ের রুটি নিয়ে আসি। ঢাকায় এই রুটির চাহিদা বেশ। অনেক দূর থেকে লোকজন আসে এই রুটি খেতে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় লোকজন যারা জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে থাকে। তারাও মাঝে মাঝে নিজের এলাকার খাবারের স্বাদ নিতে এই দোকানে আসে। রুটির দাম মাত্র ২৫ টাকা। বিকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই রুটি পাওয়া যায়। রুটির স্বাদ বাড়ানোর জন্য সাথে রয়েছে পেয়াজের চাটনি, ধনে পাতার ভর্তা, বেগুন ভর্তা এবং গরু ভুনা ও ভুঁড়ি ভুনা, হাঁসের মাংস।
দোকানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে বুঝা যায়, রুটিটা কতো সুস্বাদু! সবাই আনন্দ নিয়ে খাচ্ছেন। হাসিব নামের একজন বললেন, আমি প্রতিদিন এখানে রুটি খেতে আসি। এই ফার্স্ট ফুডের যুগে ভিন্নস্বাদের দেশীয় খাবার মেলা ভার। রুটিটা বেশ মচমচে। হাঁসের মাংস দিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু।
রুটি বানানোর কারিগর হামিদ বলেন, পরিবার ছেড়ে ঢাকা শহরে থাকি। মাসকালায়ের রুটি বানিয়ে পেটে ভাতে টিকে আছি। এছাড়া পরিবারকেও টাকা পাঠাতে পারি। এর থেকেও বড় যে সুখ, মানুষকে মাসকালায়ের রুটি খাওয়ায়ে তৃপ্তি পায়। মানুষও আনন্দ পায়। এই আনন্দে দিন কাটে হামিদ মিয়ার।
রাজশাহী বার্তা/admin