বাণিজ্য মেলা শুধু নামেই আন্তর্জাতিক

সময়: 5:23 am - January 27, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 161 বার

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ক্রমশই রং হারিয়ে ফেলা বাণিজ্য মেলা বৃহৎ পরিসরের দোকানদারিতে পরিণত হয়েছে। দেশি পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রসারিত করতে উদ্যোগ নেই আয়োজকদের। বিদেশি ক্রেতাও আসছেন না। প্রতিবছর মেলা শেষে রফতানি আদেশের যে তথ্য দেয়া হয়, তা নিয়েও ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নামকাওয়াস্তে বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত বেশিরভাগ প্যাভিলিয়নে দেশি ব্যবসায়ীরা স্টল বসিয়ে ব্যবসা করছেন। ফলে বাণিজ্য মেলা এখন শুধু নামেই ‘আন্তর্জাতিক’।

বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে। যেখানে বিদেশি ক্রেতারা আসেন, পণ্যের গুণগত মান যাচাই ও দরদাম করেন এবং পছন্দের পণ্যের ক্রয়াদেশ দেন। অন্যদিকে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ধারণা পান।

বাংলাদেশেও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত ২৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলে দেশীয় পণ্যের প্রসার ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু ঢাকা বাণিজ্য মেলায় এসব উদ্দেশ্যের কোনোটিই দেখা যায় না এবং এত বছরেও এটি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করতে পারেনি। শুধু দেশীয় গুটিকয়েক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বেশিরভাগ খুচরা বিক্রেতা এখানে অংশ নেন। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বড় অর্ডার নিয়ে আসেন না বললেই চলে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে। এখন ‘আন্তর্জাতিক মেলা’র নামে ‘দোকানদারি’ হয়। আর ইপিবি মেলা আয়োজন করে শুধু মুনাফা করতে। এতে ঢাকার সাধারণ দোকানদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। দীর্ঘদিন ধরে ইপিবি এ অনৈতিক কাজটি করছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও পণ্য প্রদর্শনী ৩ থেকে ৫ দিনের বেশি হয় না। সেখানে কোনো পণ্য বিক্রি হয় না, শুধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের ক্রয়াদেশ দিতে পারেন। অথচ আমাদের বাণিজ্য মেলা মাসব্যাপী হয়। মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ দুর্নীতি বন্ধে এফবিসিসিআই থেকে লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি ইপিবি। ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে মাসব্যাপী মেলা আয়োজন করতে দেবেন না দোকান মালিকরা। এটি প্রতিহত করা হবে।

হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, এ বছর মেলার সময় বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ঢাকার সব দোকান মালিক দোকানপাট বন্ধ করে মেলার দিকে অগ্রসর হব।

এদিকে সরেজমিন বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা ফুটপাতের হকারদের মতো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হাঁকডাক দিয়ে পণ্যের প্রচার করছেন। কখনও ছোট ছোট স্পিকারে, আবার কখনও খালি মুখেই পণ্যের ভালো দিকগুলো তুলে ধরছেন। কোথাও কোথাও পণ্যের পাশে আলাদা স্পিকার বসিয়ে পণ্যের গুণকীর্তন ও দাম বলতে দেখা গেছে। আবার কোথাও একটা পণ্যের সঙ্গে একাধিক পণ্য ফ্রি দেয়া হচ্ছে।

অব্যবস্থাপনা সর্বত্র : এবার মেলায় প্রবেশ ফি বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়েনি। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ছুটির দিনে দীর্ঘ লাইন ধরে মেলায় প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে বিশ্রামের জায়গা রাখা হয়নি। এছাড়া মেলা বিভিন্ন জায়গায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যদিও মেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ১২৮ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা গেছে।

ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলো থেকে পণ্য কিনে। এসব প্যাভিলিয়নে দেশীয় বিক্রেতাদের ব্যবসা করতে দেখা গেছে। বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১৮-এ গিয়ে দেখা গেছে, কাপ্তান বোরকা নামক স্টলে দেশি বিক্রেতারা স্টল নিয়েছেন। পারভিন ফ্যাশন নামে স্টলে বিক্রি হচ্ছে থ্রি-পিস। এছাড়া বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১-এ গিয়ে দেখা গেছে, প্যাভিলিয়নের ভেতর ছোট ছোট স্টল করে জুতা ও গহনা বিক্রি করছেন দেশি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দেশি ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি শাল, চাদর ও থ্রি-পিসও বিক্রি করছেন।

মেলায় অংশ নেয়া দেশীয় সাধারণ স্টল মালিকদের অভিযোগ, বড় বড় মার্কেটের ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলো বরাদ্দ নেন। তারা সেখানে বেশি দামে চীন-ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিক্রি করেন। অথচ একই পণ্য সাধারণ স্টলগুলোকে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক ক্রেতা না বুঝে প্রতারিত হচ্ছেন।

বিদেশি প্যাভিলিয়নের ভেতরে কাপ্তান বোরকা স্টলের বিক্রেতা হালিমা বলেন, আমাদের স্টলের সব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা। তাই বিদেশি প্যাভিলিয়নে আমরা স্টল নিয়েছি।

রফতানি আদেশের তথ্যে গোঁজামিল : প্রতিবছর মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে রফতানি আদেশের তথ্য প্রকাশ করে আয়োজক সংস্থা ইপিবি। যদিও এ তথ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, ইপিবির প্রকাশিত তথ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে। গত বছর মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ইপিবি জানায়, মেলায় ১৬০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রফতানি আদেশ এসেছে। ২০১৮ সালে এসেছিল ১৪৩ কোটি টাকার। সে হিসাবে, রফতানি আদেশ ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ইপিবি জানিয়েছিল, মেলায় ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার রফতানি আদেশ এসেছে।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর