গোমস্তাপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ
সময়: 11:40 pm - May 9, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 231 বার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের নসিবন্দীনগর-লালকোপরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হল জালাল উদ্দিন(৪৫), তার স্ত্রী নাদিরা বেগম(৩৫) ও ছেলে রানা(২৫), ওই এলাকার ইসরাফিলের ছেলে তোহিদুল(৩৫), বাবুল(৫৫), শরিফুল(৪০) ও আব্দুল আজিজ(৪৫)। আহতদের মধ্যে ৩ জন কে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা হাসপাতাল ও বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, গোমস্তাপুর ইউনিয়নের নসিবন্দীনগর-লালকোপরা গ্রামের পৌনে সাত বিঘা জমিতে একটি আমবাগানের মালিকানাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ওই এলাকার মৃত মো. নজর আলীর থেকে মৃত মাহমুদ আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম পৈত্রিক সূত্রে জমিটির মালিকানা পায়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর থেকে তা ভোগ করে আসছে রহিমা ও তার ছেলেমেয়েরা। কিন্তু জমিটির প্রকৃত কাগজপত্রগুলো বিভিন্ন কায়দায় হাতিয়ে নিলে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ঘাটনগর এলাকার ফিটু মিয়ার ছেলে ইমরুলের সাথে লালকোপরা গ্রামের রহিমা বেগমের ছেলে জালাল উদ্দিনের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। শুক্রবার দুপুরে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ইমরুল ৫০-৬০ লোকজন নিয়ে ওই জমির দখল নিতে গেলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এর আগেই মেশিনের করাত দিয়ে ২৫টি আম, ১টি লিচু ও ৩টি নিম গাছ কেটে ফেলে ইমরুলের লোকজন। এমনকি প্রত্যেকটি আম গাছে ঝুলছে আমের গুটি।
রহিমা বেগম জানান, নিজেদের জমির কাগজপত্র ঠিক করবো বলে, এই জমির দলিলপত্র নিয়ে নিয়েছে। এখন তা আর দিচ্ছে না। তাদের অনেক টাকা ও প্রভাব, এমনকি পুলিশকেও কিনে রেখেছে। তাই পুলিশের সহায়তা নিয়েই তাদের মদদে তারা এসব অন্যায় করছে। এতোদিন কোথায় ছিলো তারা? আমার বাবা স্বাধীনের আগে থেকে ভোগ করছে, আমরা প্রায় ৫০ বছর থেকে মালিকানায় রয়েছি। ১০ বছর আগে থেকে জমিটির মালিকানা দাবি করে ঝামেলা করছে।
রহিমা বেগমের ছেলে মো. কালাম বলেন, তারা যেভাবে অন্যায়ভাবে গাছগুলো কেটেছে, তাতে গাছ নয়, মনে হচ্ছে আমাদের শরীরে করাত চালিয়েছে। নিজেদের লাগানো গাছ এগুলো, অনেক সেবা যত্নে বড় করেছি। প্রতিবছর ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকায় বাগানটি বিক্রি হয়। জীবন চলে গেলেও অন্যায়ের কাছে আমরা মাথা নত করবো না। নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি একটুও ছাড়বো না।
রহিমা বেগমের নাতি মো. রানা বলেন, দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আসায় গাছ কাটতে শুরু করলেও আমরা কেউ তাদের কাছে যেতে পারিনি। তবে অন্যায় দেখে গ্রামবাসী যখন, এর বিরুদ্ধে সকলে মিলে বেরিয়ে আসে ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন তারা তাদের মটর সাইকেল, সাইকেলসহ সব ফেলে পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, আমরা ৫০-৬০ বছর থেকে দেখছি ও ছোট থেকেই জানি, জমি ও আমবাগানটি রহিমা বেগমের। এমনকি তারাই ভোগদখল করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে এতে গাঁয়ের জোর খাটিয়ে জমিটি নিজেদের দাবি করছে। গ্রামবাসী সকলে মিলে প্রতিরোধ করলে, তারা পালিয়ে যায়।
পাশের গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তারা যেভাবে অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছে, সেটা একটা স্বাধীন দেশে কল্পনাও করা যায় না। দিনের বেলাতে ৫০-৬০ লোক নদীর ওপার থেকে এসে এভাবে জমি দখলের ঘটনা বর্তমান সময়ে বিরল। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপরাধ মানুষকে মারধর ও অর্থসম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও গাছ কাটার বিষটি স্বীকার করে ইমরুলের ছোট ভাই রেজাউল বলেন, জমিটি বিনিময় সম্পত্তি হিসেবে আমার দাদার ছিলো। এখন আমরা এর মালিকানা পওয়ার কথা, আমাদের দলিলপত্রও ঠিক আছে। তবে আমের গুটি ঝুলে থাকা গাছগুলো কাটা অমানবিক হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।
গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) জসীম উদ্দীন জানান, একটি জমি নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।