কালুর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আকুতি
আর কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন না কালু? এমন প্রশ্ন কালুকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। টানা ২২ বছর ধরে অজ্ঞাত রোগে ভুগছেন। যত দিন যায় অসুস্থ বৃদ্ধি পেয়ে বট গাছের জড়ের মত নিচে ঝুঁলতেই আছে। ভীষণ কষ্টে দিন কাটছে তার। দিনে দিনে শারীরিক শক্তি হারাচ্ছেন তিনি। জীবন আরো কঠিন হয়ে উঠছে। জমিজমা নেই বললেই চলে। শুধু বসত ভিটাতে মাত্র ৯ কাঠা জমি আছে। মা অতিকষ্টে কিনেছিল জমিটুকু। যা আমি ও আমার দুই বিধবা বোনের। আমার সংসার চলে অতি কষ্টে। চারটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তারা গার্মেন্টেসে চাকুরি করে। আর ছেলেটি কামলা খাটে। তাদের সহযোগিতায় কোন রকমে বেঁচে আছি। শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা রাঘববাটি গ্রামের মহসিনের ছেলে মোশারফ হোসেন কালুর সাথে কথাগুলো হয় এ প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর আগে প্রথমে শরীরের ডানহাতের কনুইতে দানা আকারে ফোসকা উঠেছিল। আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠে। অভাবের তাড়নায় ভাল চিকিৎসা করাতে পারিনি। গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করিয়েছি। এতে কোন ফল হয়নি। কয়েক বছর আগে আনোয়ারুল ইসলাম ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। তিনি অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে মোটা অংকের টাকা খরচ হবে। তাও আবার স্থায়ী নয় বলে তিনি জানিয়েছিলেন। বর্তমানে অবস্থা খুবই খারাপের দিকে। হাতের মাংসগুলো নীচে ঝুঁলে গেছে। পোশাক পরতে পারিনা। আলাদা করে পোশাক করতে হয়। বাইরে যাইতে পারি না। বাড়িতে অসহায় জীবনযাপন করছি। এ পর্যন্ত কোন সহযোগিতা আমি পাইনি। এমনকি প্রতিবন্ধী কার্ডও হয়নি আমার। আগে শরীরে মাঝে মাঝে স্থানে অসুস্থ দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃখের সাথে মোশারফ হোসেন আরো বলেন, আমার মাকে রেখে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন থেকেই আমাদের প্রতি বিরুপ আচরণ শুরু করে। বাবার জমিজমা অনেক থাকলেও আমাদের ৩ ভাই-বোনকে কিছুই দেননি। মা মারা গেছে। বাবা এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু কোনদিনই আমাদের খোঁজখবর নেন না। আমার চিকিৎসা করার জন্য সরকারের বা বিত্তবাননের সহযোগিতা কামনা করছি। মোশারফ হোসেনের বিধবা দুই বোন নাজিরা বেগম ও সোনা বেগম জানান, আমরা ছোট থেকে আমার ভাইকে এ অসুখে ভুগতে দেখে আসছি। সে খুব কষ্টে আছে।
বিধবা বোন সোনা বেগম রাজশাহী বার্তাকে জানান, ভাইয়ের মত আমিও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি। আমার শরীরের মাংসপিন্ড দিন দিন বট গাছের জড়ের মত নিচের দিকে ঝুঁলতেই আছে। তবে বর্তমানে আমার চিকিৎসা হলে সুস্থ হবো বলে বিশ্বাস করি। তবে অভাবের তাড়নায় চিকিৎসা করাতে পারি না। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ঘটনাটি আমাদের জানা ছিল না। জরুরী ভিত্তিতে যোগাযোগ করে তাকে চিকিৎসা কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে সাহায্য করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি তার জন্য প্রতিবন্ধী কার্ড ও ভাতার ব্যবস্থা করবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাক্তার জাহিদ নজরুর ইসলাম চৌধুরী রাজশাহী বার্তাকে জানান, এ রোগটির নাম হলো নিউরো ফাইব্রো মেটাসিস। এটি একটি অজ্ঞাত রোগ বলা যায়। এটির কোন চিকিৎসা নেই। তবে নতুন নতুন অবস্থায় হলে কিছুটা চিকিৎসা করা যেতো। অর্থাৎ তখন অপারেশন করা যেতো। বর্তমানে অপারেশন করলে রোগী মারা যেতে পারে। তাই এখন আর ওই পথে না যাওয়ায় ভাল। তিনি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এটিই প্রথম নিউরো ফাইব্রো মেটাসিস রোগী।
রাজশাহী বার্তা/admin