ঘুরে আসুন রবীন্দ্রনাথের আদি বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি

সময়: 9:42 pm - February 20, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 208 বার

আবু আফজাল সালেহ

হঠাৎ দুলে উঠলো নৌকা। ভাসছি রূপসা নদীতে। পুলকিত! যাচ্ছি ওপারে পিঠাভোগ গ্রামে। যেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের বাড়ি। ‘কুশরী’ থেকে ‘ঠাকুর’। পিঠাভোগ থেকে জোড়াসাঁকো। দক্ষিণডিহি থেকে শান্তিনিকেতন।

খুলনার রূপসা। নদী পেরিয়ে ওপারে পৌঁছলাম। মাহিন্দ্রতে চড়ে রূপসা উপজেলা সদর কাজদিয়ায়। ৮ কিলোমিটার গ্রামের নিরিবিলি গ্রামীণ রাস্তা পেরিয়ে কাজদিয়া। তারপর অটোভ্যানে ৩ কিলোমিটার দূরের পিঠাভোগ। মূল সড়কের সাথেই তোরণ। কলকাতার জোড়াসাঁকোর আদলেই তৈরি। রং বা স্টাইল। তবে কলকাতার তোরণের মতো ঘিঞ্জি বা সরু নয়। কারণ ওটা শহরে আর এটা গ্রামে। সবুজের আবহ আছে।

ঢুকে গেলাম ক্যাম্পাসে। অবহেলায় রয়েছে। উন্মুক্ত মঞ্চ দেখলাম। সেখানেই রবিঠাকুরের আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। এরপর সংগ্রহশালায় ঢুকলাম। একতলাবিশিষ্ট ভবনে পাঠকক্ষও আছে। রবিঠাকুরের ছবি, বংশতালিকা রয়েছে। কবির নবীন প্রজন্মের একজন দেখাশোনা করেন। বাইরে রবিঠাকুরের বংশতালিকা আছে।

সেখানে দেখা যায়, কুশরী থেকে কলকাতার পরিবার ঠাকুর পদবি পেয়েছেন। এখানে কবির বর্তমান বংশধরেরা ‘কুশরী’ উপাধী নিয়ে আছেন। রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান অবকাঠামো ও সৌন্দর্যবর্ধন উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করেন বলে এলাকাবাসী জানান। প্রতিবছর ২৫ বৈশাখে কবির জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের মেলা হয়।

এরপর আবার নদী পেরিয়ে কবির শ্বশুরবাড়ির দিকে যাত্রা। নদী পেরিয়ে যেতে নৌকা ভাড়া লাগলো ৫ টাকা। যাওয়ার সময়ও একই ভাড়া। খুলনা থেকে ২৩-২৪ কিলোমিটার দূরে, বাসে ফুলতলা উপজেলা বাজারে। যশোর-খুলনা রোডে। পাশের বেজেরডাঙ্গায়ও নামা যায়। এরপর অটোরিকশায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণডিহি।

রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি রয়েছে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি। রবীন্দ্রনাথের ২২ বছর বয়সে বিবাহ হয় দক্ষিণডিহি গ্রামের বেনীমাধব রায় চৌধুরীর মেয়ে ভবতারিনী ওরফে মৃণালিনী দেবীর সাথে। এখানে জাদুঘর করা হয়েছে। সমৃদ্ধ। আছে কবি রবিঠাকুরের স্মৃতিচিহ্ন। বৈশাখ মাসে এখানে মেলা হয়। কমপ্লেক্সের দোতলায় ঝুল বারান্দায় হাওয়া খেতে খেতে মনে পড়ে, ‘তোমার খোলা হাওয়ায়…’

দোতলা বিশিষ্ট এ কমপ্লেক্সের নিচ তলায় লাইব্রেরি বা পাঠকক্ষ আছে। বইয়ের সমাহার বেশ ভালো। উপরতলা বা নিচ তলায় তথ্যবোর্ডও আছে। রবিঠাকুরের পেইন্টিংস, হস্তলিপি পাণ্ডুলিপিও আছে। শিলাইদহের মতো সমৃদ্ধ না হলেও বাংলাদেশে রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পতিসর বা শাহজাদপুর থেকে কম নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিরিবিলি পরিবেশ। কমপ্লেক্সে ঢুকতেই দু’পাশে রবিঠাকুরের দুটো ছোট আবক্ষ ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে। দোতলাবিশিষ্ট এ ভবন দেখতেও বেশ সুন্দর।

রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত দক্ষিণডিহি। যশোর-খুলনা মহাসড়কেই ফুলতলা উপজেলা বাজার। এরপর সর্পিল পথে দক্ষিণডিহি। গ্রামের ঠিক মাঝখানেই এ বাড়ি। ছায়াঢাকা এ গ্রামেই সগৌরবে মাথা উঁচু করে আছে বাড়িটি। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ-গাছালিতে ঠাসা সৌম্য-শান্ত গ্রাম। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক ছিল নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী আর কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীর জন্ম এ গ্রামেই। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও দক্ষিণডিহিরই মেয়ে। তার আরেক নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। পরে কলকাতায় পাড়ি জমান দক্ষিণডিহির ঠাকুর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য।

যৌবনে কবি কয়েকবার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামাবাড়িতে এসেছিলেন বলে জানা যায়। প্রতিবছরের ২৫ বৈশাখ এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রমেলা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এখানকার লাইব্রেরি বা পাঠকক্ষ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ ফি মাত্র ১০ টাকা। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটি নিয়ন্ত্রণ করে।

বাস বা ট্রেনে নওয়াপাড়া বা খুলনা যাবেন। এরপর বাস বা টেম্পুতে ফুলতলা উপজেলা বাজার। এখান থেকে অটোবাইকে চিকন রাস্তা দিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার যেতেই রবিঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। যা রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য খুলনা বা নওয়াপাড়া ভালো হবে। বিভাগীয় শহর খুলনায় বিভিন্ন মান ও দামের অসংখ্য আবাসিক বা খাবার হোটেল রয়েছে। ফুলতলা বাজারে মাঝারি মানের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর