চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতা
সময়: 6:53 pm - January 27, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 171 বার
আজমাল হোসেন মামুন: ষাট, সত্তর ,আশির দশক পর্যন্ত ঢাকার বাইরে শখের বশেই সাংবাদিকতায় আসতো মানুষ। সেই সময়ে মফস্বলের সচ্ছল পরিবারের তরুণ, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা নিতান্ত শখের বশে কিংবা রাজনৈতিক আদর্শের টানে, আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সাংবাদিকতা পেশায় আসতেন। অন্য পেশা বা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন তারা। তখনকার প্রেক্ষাপটে স্থানীয়ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে ভাবার সুযোগও ছিল না। সেজন্য সেই সময় সাংবাদিকতায় ঝুঁকির মাত্রাও ছিল অপেক্ষাকৃত কম বলা যেতে পারে।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা যেমন সম্মানজনক ও মহৎ ঠিক তেমনি সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। ঝুঁকিটা এখন ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় ভয়াবহ মাত্রায় বেশি। শহরে কাজ করার সুবিধা হলো একটি পত্রিকা বা মিডিয়ায় একসঙ্গে অনেক সাংবাদিক কাজ করে থাকেন। একেকজন সাংবাদিক যে যার মতো একেকটি বিট কভার করেন। ফলে নিজস্ব বিটে কাজ করার সময় তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সবকিছুতে অবলম্বন করেন নিজস্ব কৌশল বা স্টাইল। এছাড়া সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর রিপোর্টের দায় দায়িত্বও চলে যায় সম্পাদক বা পত্রিকার মালিকপক্ষের ওপর। এ ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ শক্তির পক্ষে নির্দিষ্ট সাংবাদিককে খুঁজে বের করা কঠিন। কিন্তু মফস্বল তথা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনের সাংবাদিককে খুঁজে পাওয়া সহজ।
অনেক সাংবাদিকের একমাত্র পেশা সাংবাদিকতা হলেও উল্লেখযোগ্য দুই একটি পত্রিকা কিংবা মিডিয়া ছাড়া অধিকাংশ পত্রিকা-মিডিয়া থেকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না স্থানীয় সাংবাদিকদের। সেজন্য স্থানীয় অনেক সাংবাদিককে কষ্ট করে চলতে হয়।
জেলা পর্যায়ে যেসব সাংবাদিকরা কাজ করছেন, তাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোন নিয়োগপত্র নেই । অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জেলা প্রতিনিধিদের কোনও মাসিক বেতন দেয় না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বিচারপতি বজলার রহমান ছানা, জি. কে শামসুল হুদা, মোহসিন মাস্টার, ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন,ডিএম তালেবুন্নবী, অধ্যাপক শাহাবুদ্দীন, মোহিত কুমার দাঁ, ডা. বুলবুল-এ গুলেস্তান, এম.এ. মতিন, মোঃ শহীদুল্লাহ, মোঃ তসলিম উদ্দিন, শামসুজ্জামান বকুল, তসিকুল ইসলাম বকুল, মোঃ জোবদুল হক,মোঃ গোলাম মোস্তফা মন্টু, সামশুল ইসলাম টুকু, শামীম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আলিমুল হক সিদ্দিকী, সৈয়দ নাজাত হোসেন, ইসমাইল হোসেন দিনাজী, শামীম উদ্দিন,মোদাশ্বের হোসেন, মোঃ জোনাব আলী, আব্দুর রাজ্জাক রাজু, বুলবুল চৌধুরী, এস. এম. জি ফারুক স্বপন, সুকুমার,শহীদ শুকরানা ডালু, বাবুল কুমার ঘোষ, এ্যাডভোকেট সোহরাব আলী, প্রফেসর ড. মাযহারুল ইসলাম তরু, শহিদুল হুদা অলক, মাহবুবুর রহমান মিন্টু, মিজানুর রহমান কুটু, আনোয়ার হোসেন দিলু, এমরান ফারুক মাসুম, মাহবুব নানা, রফিকুল আলম, আলমগীর কবির কামাল, মোঃ কামাল হোসেন,এম. এ জামান হিরো, আমিনুল ইসলাম তন্ময়, আবুল কাশেম, গোলাম রাব্বানী টমাস, এ. কে. রেজাউন নবী তপু,মোঃ জালাল উদ্দিন, মোঃ মনিরুল ইসলাম বাদল, জাফরুল আলম, ডাবলু কুমার ঘোষ, নাইমুল ইসলাম, আবু বাক্কার, সুলতানা নাদিরা বেগম, শাহরিয়ার আলম ফিডেল, অসিত সরকার, ফাউজুল কবির রনি, আব্দুর রশিদ, নিয়াজ কোমল, রোকনুজ্জামান, আহসান হাবীব, এএসকে রোকন, রায়হান আজম খান নাহিদ, অলিউজ্জামান রুবেল, মোঃ ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট, প্রাচ্য পলাশ, ইয়াকিন আলী, হযরত আলী, ফজলে রাব্বী নবাব, আমিনুল ইসলাম জনি, ওমর ফারুক, শাহ জামাল, আজিজুর রহমান শিশির, আব্দুল হাফিজ, মাহফুজুর রহমান, ফয়সাল মাহমুদ,রহমত আলী, জাহিদুর রহমান হিমেলসহ আরো অনেকে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাংবাদিকতা করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতা জগতে আরো বিচরণ করছেন রবিউল হাসান ডলার, আব্দুল মালেক, নাসিম মাহমুদ, কাজী আব্দুল বারী, আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাজেদুল হক সাজু, হোসেন শাহনেওয়াজ, আব্দুল মান্নান, আশরাফুল ইসলাম, কামাল শুকরানা, হারুন-অর-রশিদ, মনোয়ার হোসেন জুয়েল, আসাদুজ্জামান, আব্দুর রব নাহিদ, জাকির হোসেন পিংকু, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মোঃ জোহরুল হক, মেহেদী হাসান, কপোত নবী, সাখাওয়াত জামিল দোলন,প্রমুখ সাংবাদিকরা লেখনীর মাধ্যমে জেলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরছেন। এছাড়াও সাংবাদিকতায় অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসছেন। ঢাকায় প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেধাবী সন্তানরা সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করছেন। ফাইজুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাক, খাদেমুল ইসলাম নিউএইজ,আনোয়ার হক, সাব্বির আহমেদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, জুয়েল মুস্তাফিজ, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, জিয়াউল হক সবুজ, তাসকিনা ইয়াসমিন তাসকিনা,রাফিয়া চৌধুরী, সাজিদ তৌহিদ, সোমা ইসলামসহ অনেকেই প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। রাজশাহী বিভাগে আনু মোস্তফা, রোকনুজ্জামান,সরদার আব্দুর রহমান, জিয়াউল গণি সেলিম, আসলাম উদ্দৌলা.মানিক রায়হান বাপ্পী, ড. সাদিক প্রমুখ সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করছেন। শুধু তাই নয়, বিবিসি বাংলায় একসময় প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল এবং হুসাইন আব্দুল হাই ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সুনাম কুড়িয়েছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তরুণ শিক্ষক মাহমুদুল হক ছটিক ডেইলি স্টার পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সুনামের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। সাংবাদিকতা বিষয়ক কয়েকটি বইয়ের রচিয়তাও তিনি।
মফস্বলে দু ধরনের সাংবাদিক রয়েছে।মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তাদের সব বিষয়ের উপর সংবাদ তৈরী করে ঢাকায় পাঠাতে হয়। অপরপক্ষ লেখালেখি বিষয়ে অনভিজ্ঞ।এমনকি শেখার মানসিকতাও নেই। শুধু কাট-কপি-পেস্ট করে অন্যের লেখা নিউজ নিজের নামে চালিয়ে দেয়। এদেরকে আগেভাগেই দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি উপজেলায় অনেক সাংবাদিক রয়েছে । কথিত ও নামধারী সাংবাদিকরা বিভিন্ন জায়গায় হুমকি ধামকি দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারছে না। গোমস্তাপুরে ৪ জন কথিত সাংবাদিক আটক (৫মার্চ ২০২০, দৈনিক সোনার দেশ)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ জন ভুয়া সাংবাদিক আটক ( দৈনিক ঢাকা টাইমস, ২১মার্চ ২০২০)। একটি ফেসবুক আইডি থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর গুজব প্রচার করেন। বিষয়টি জেলা পুলিশের নজরে এলে তদন্তের মাধ্যমে এ কথিত সাংবাদিকের অবস্থান নিশ্চিত করে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার থেকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম সংস্থা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি বাংলা) ভুয়া লোগো ও আইডি কার্ড জব্দ করা হয়।হত্যা ও মাদকসহ একাধিক মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে কিছুদিন আগে আদালতে মহরিল হিসেবে কাজ করতেন এই কথিত সাংবাদিক।
এ কথিত সাংবাদিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোইনি। অথচ নিজেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা দাবি করেন।
এছাড়াও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে অনেক নামধারী সাংবাদিককে জনতা আটক করে উত্তম মাধ্যম দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রাজশাহীর কথিত সাংবাদিক ফেনসিডিলসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেফতার ( রাজশাহীনিউজ২৪. কম ২৩ আগস্ট ২০২০) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কিছুদিন আগে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে বলেছেন, এখন হকার থেকে চায়ের দোকানি পর্যন্ত সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে।এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
আইনজীবী, শিক্ষক হতে হলে নির্দিষ্ট পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু সাংবাদিক হতে হলে তেমন কোন পরীক্ষার মাধ্যমে নেয়া হয় না।এতে স্বল্প শিক্ষিত মানুষ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে শুধু আইডি কার্ড সংগ্রহ করে।
এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাংবাদিকতার অবস্থা খুবই নাজুক। মূলধারার গণমাধ্যমের উচ্চ শিক্ষিত সাংবাদিকও পেশার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। সেজন্য এ বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে। কারণ, নিঃসন্দেহে সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক।
লেখক:
শিক্ষক ও কলাম লেখক
(লেখাটি সাপ্তাহিক সোনামসজিদ পত্রিকাযর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে)
রাজশাহী বার্তা/admin