শিবগঞ্জে ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি-কাশি, হাটবাজারে মানুষের ঢল
সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশিসহ করোনার উপসর্গ ছড়িয়ে পড়েছে। রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন। তবে সচেতনতা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে এসব লোক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও কাজের মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ পরিবারের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল। তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় শনিবার উপজেলায় জরুরি বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, আমি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর পাচ্ছি, ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যাথা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব লোকেদের দ্রুত কোভিড টেস্টের আওতায় আনতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে সিভিল সার্জনকেও।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান মবিন বলেন, ঈদের কয়েক দিন পর থেকেই দৈনিক শতাধিক মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে। এদের মধ্যে বয়স্ক নারী পুরুষ যেমন আছেন তেমনি আছে শিশুরাও। আমাদের মেডিকেল অফিসাররা ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা চালু রেখেছেন। আগতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের অধিকাংশের মধ্যে করোনার উপসর্গ আছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দে টেকনিশিয়ান ও জনবলের অভাবে সবার নমুনা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীসহ বিভিন্ন আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিবেদন আসার পর যারা পজিটিভ হচ্ছেন তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হচ্ছে। কারো শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
শিবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তার সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. শিমুল বলেন, শিবগঞ্জের সঙ্গে তিন দিকে শতাধিক কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। অনেক এলাকায় বাংলাদেশি গ্রামের মাত্র কয়েক গজের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় গ্রাম। এসব এলাকা ঘন জনবসতিপূর্ণ। কোথাও কোথাও কাঁটাতারের বেড়াও নেই। ভারতীয়রা যেমন অবাধে বাংলাদেশি গ্রামে ঢুকতে পারে তেমনি বাংলাদেশিরাও ভারতের গ্রামে ঢুকতে পারে। অনেকেই সীমান্ত অতিক্রম করে গবাদিপশু চরাতে ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্তে অবৈধ চলাচলের বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই বিজিবিসহ প্রশাসনকে কঠোরতা অবলম্বের অনুরোধ করলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ পাচ্ছি। বিশেষ করে মাদক চোরাচালানে জড়িতরা যেমন গোপনে ভারতে প্রবেশ করছে তেমনি অনেক ভারতীয়ও মাদকের চালান পৌঁছে দিতে সীমান্তের এপারে আসছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন, তাদের পরীক্ষা হলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হতে পারে।
ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি নিশ্চিতের জন্য এসব সন্দেহভাজনদের নমুনা ঢাকায় আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজনরা এখন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।
রাজশাহী বার্তা/admin