বুলি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগ
জাহাঙ্গীর আলম সোহান: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান এজাবুল হক বুলির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
১০টাকা কেজির চাল বিক্রি, করোনা পরিস্থিতির জন্য সরকারি রিলিফের চাল বিতরন ও ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি বিভিন্ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি চাকুরী দেয়ার নাম করে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকুরী না হওয়ায় টাকা ফেরত না দেয়া, ধনবানদের কাছে চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে মারধর, বিচার করে দেয়ার নামে বাদি-বিবাদিদের টাকা আত্মসাৎ, নিয়মিত পরিষদে না বসাসহ ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান বুলির বিরুদ্ধে। তার এমন কর্মকান্ডে আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটছে ইউনিয়নবাসীর। গত ১২ এপ্রিল ৩২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দীন। মামলার এজাহারে তার মেলার মোড়ের অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আঁটকিয়ে রেখে মারধর ও ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বুলি ছাড়াও এ মামলায় মহারাজপুর হিন্দুপাড়ার মৃত নূর ইসলামের ছেলে লিটন মেম্বারসহ আরো ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বাদী কামাল উদ্দীন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান এজাবুল হক বুলি কয়েকদিন আগে তার কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বাধাসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে মহারাজপুর মেলার মোড়ের তার অফিসে বুলি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন লোক দলবদ্ধ হয়ে লাঠি, লাদনা, লোহার রড ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে অনধিকার প্রবেশ করে তার কাছে ৩২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বুলি চেয়ারম্যানের হুকুমে তার লোকজন তাকে জোর করে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। গত ১২ এপ্রিল শনিবার মহারাজপুরের বাইড়্যাপাড়ার মো. হযরত আলী (৩৫) ঠান্ডা-জ্বর হলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওষুধ আনতে গেলে সন্ধ্যার পর বের হওয়ার অযুহাতে রাস্তা অবরোধ করে বুলি চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে চেয়ারম্যান আসার পর গাড়ি হতে পিস্তল বের করে কপালে ধরে, ভয়ভীতি দেখায় ও মারধর করে জীবননাশের হুমকি দেয়। মহারাজপুর ডালপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গত রবিবার ওষুধ নিতে মিয়াপাড়া মোড়ে যাওয়ার সময় কোন কথা ছাড়ায় একজন গ্রাম পুলিশ সদস্য হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে।
পরে চেয়ারম্যান আসার পর বিভিন্ন হুমকি দেয়। প্রায় ২ মাস আগে ইউনিয়নের ফকিড়পাড়ার একটি রাস্তার কাজ আটকে দেয় এলাকাবাসী। কারন ইউপি চেয়ারম্যান বুলির নির্দেশে রাস্তার কাজ ৪নং ইট দিয়ে করা হচ্ছিল। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আবার ভালোভাবেই কাজ শুরু হয়। ফকিরপাড়া এলাকার নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যক্তি জানান, ছেলের চাকুরী দেয়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম চেয়ারম্যানের হাতে। কিন্তু চাকুরী না হওয়ায় টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও অনেকবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা চাইতে গেলে উল্টো আমাদেরই হুমকি দিচ্ছে।
চেয়ারম্যান এমন আরো কয়েকজনের কাছে টাকা নিয়েছি কিন্তু কাজ না হলেও ফেরত দেয়নি বলেও জানান তিনি। জানা যায়, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তিনিও যুক্ত হন সেই দলের রাজনীতির সাথে। জেলা শহরের স্বরূপনগরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির অত্যাচারের কারনে ভীতির মধ্যেই দিন পার করছেন ইউনিয়নবাসী। সকলেই মুক্তি চাই বুলি চেয়ারম্যানের এমন দুর্নীতি-অনিয়ম ও নির্যাতন-অত্যাচার থেকে। এসব দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান এজাবুল হক বুলি।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন জানান, চাঁদাবাজির মামলাটির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, চাঁদাবাজির যে মামলা হয়েছে সেটি পুলিশ তদন্ত করবে এবং তার উপরই নির্ভর করবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসনিকভাবে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রাজশাহী বার্তা/admin