নাচোলে অমানবিক নির্যাতনের শিকার অসহায় নারী, নিরাপত্তা হুমকিতে পরিবার
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বামী হারানো এক অসহায় নারী। হামলাকারীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সেই নারীর পরিবার। হামলার শিকার আহত মোসা. ফেরদৌসী বেগম (৩৫) নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খলসী-তালশীশা গ্রামের মৃত মো. কামুরুদ্দিনের মেয়ে। রাস্তায় গরু বাধাঁকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টার দিকে দুইজন মিলে আতর্কিত হামলা চালায় ফেরদৌসীর উপর। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্বামী হারানো অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া ৩ সন্তানের জননী ফেরদৌসী। হামলার দিনই নাচোল থানায় অভিযোগ করেছেন তার ভাই।
অভিযোগ ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, প্রতিবেশী এমাজ উদ্দিনের ছেলে একাধিক মাদক মামলার আসামী আব্দুস সামাদ ও তার ফুফাতো ভাই মো. কালুর ছেলে স্থানীয় এনজিও-স্টার সোসাইটির ম্যানেজার তমাস আলী পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা চালিয়েছে। ফেরদৌসীর ভাই জাহির হাসান জানান, পাশের বাড়ির সামনে নিজ জমিতে গত ৩-৪ বছর ধরে গরু বেধেঁ আসছে ফেরদৌসী। নিজ জমিতে বাঁধার পরেও শুধুমাত্র সামাদের বাড়ির সামনে তা হওয়ায়, গত সোমবার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে ফেরদৌসীর ছোট ছেলে গালি দেয়ার কারন জানতে চাইলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সামাদের মা পাটকেল ছুড়ে মারে। এসময় পাশে থাকা টিনে তার হাতে চোট পায়। এর জেরে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করলে ও হুমকি দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে জানালে তারা শুক্রবার সালিশের দিন ঠিক করে।
প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে আমবাগানে গরু চরাতে গেলে ৫-৭ জন মিলে কোদালের বাট, ইট, বাঁশের লাঠি নিয়ে হামলা চালায় ফেরদৌসীর উপর। এসময় তার কানের দুল ছিড়ে নেয় ও পিঠে কামড় দেয় এবং লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটায়। ইউপি সদস্য আব্দুল হাইকে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ করতে বলেন।
আরেক প্রতিবেশী মুদি দোকানী মো. আলম জানান, ঘটনার সময় ছিলাম না, তবে সকলেই বলছে অন্যায়ভাবে মেরেছে। মাত্র ৩ বছর আগে মেয়েটার স্বামী মারা গেছে, অসহায় হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৩ ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন যাপন করছে।
ফেরদৌসীর ভাই খাদেম আলী জানান, এখনও পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে, ৫-৭ লাখ টাকা লাগলে খরচ করবো, কিন্তু মামলা করার উচিত শিক্ষা দিবো।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স্থানীয়ভাবে খুবই প্রভাবশালী আব্দুস সামাদ ও তার ফুফাতো ভাই তমাস আলী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে, আমাকেও বাড়িতে এসে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।
অভিযোগ ও হামলার বিষয়ে মুঠোফোনে তমাস আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এবিষয়ে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসরাইল হক জানান, অসুস্থতার কারনে আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে থানায় মামলা হয়েছে শুনেছি।
নাচোল থানার এসআই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহী বার্তা/Faruk Ahmed