৫৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন: সীমান্তে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় সদা জাগ্রত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশজনিত সীমান্ত হত্যা বন্ধে এবং সকল প্রকার চোরাচালানী প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ৫৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (রহনপুর ব্যাটালিয়ন)। শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার ভারতীয় সীমান্তে ৫৯ বিজিবি’র কড়া নজরদারীর ফলে অবৈধ গরু, মাদক, অস্ত্রসহ সব ধরনের চোরাচালান কমেছে।
এ বিষয়ে রহনপুর ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মাহমুদুল হাসান, পিএসসি জানান, চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে আজ (৬ জুলাই) পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণ গরু, অস্ত্র মাদক এবং অন্য যেকোনো রকমের চোরাচালান করার উদ্দেশ্যে সীমান্ত আইন লংঘন করে অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতঃ নানা বিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান রোধকল্পে অত্র ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকার প্রত্যেক বিওপির সামনে চেকপোষ্ট স্থাপন করে চোরাচালান বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সীমান্তবাসীর মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি সপ্তাহে দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্তে সকল বিওপি কর্তৃক টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
৫৯ বিজিবি অধিনায়ক বলেন, চিহ্নিত চোরাকারবারীদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিজিবির কঠোর তৎপরতায় চোরাকারবারীদের হোতা পলাতক রয়েছে। তালিকাভূক্ত/চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, গরু চোরাকারবারী এবং অস্ত্র চোরাকারবারীদের অধিকাংশকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত অপরাধীদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক পরবর্তীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অধিনায়ক কর্তৃক চোরাচালান প্রতিরোধকল্পে জেসিওস, এনসিওস এবং কোন সফল বিজিবি সদস্যদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনাকাঙ্খিত সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে প্রতিপক্ষ বিএসএফ বরাবরে এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশরোধ ও নিরুৎসাহিত করতে সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে স্বাবলম্বী করতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ এনজিওসমূহকে সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ আরো জোরদার করা হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হ্রাসের ফলে সীমান্ত এলাকার জনসাধারণ কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিশেষতঃ করোনা পরিস্থিতিতে তাদের জীবন জীবিকা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে প্রতিয়মান। এই উপলব্ধি বিবেচনায় নিয়ে সীমান্তবর্তী জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখা খুবই জরুরী বলে মনে করে বিজিবি।
অধিনায়ক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিজিবি রাজশাহী সেক্টরের উদ্যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী অসহায় ও হতদরিদ্র জনসাধারণের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে ‘আলোকিত সীমান্ত’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র জনসাধারণের মধ্য থেকে আগ্রহীদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা নির্বাচনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অত্র ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ৪৯৭১টি অসহায় ও দুস্থ্য পরিবারের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হতে প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সদর দপ্তর বিজিবি হতে অত্র ব্যাটালিয়নের অনুকূলে ইতোমধ্যে সকল প্রকার ভূমিতে চলতে সক্ষম ২টি এটিভি বরাদ্দ করা হয়েছে। উক্ত এটিভির মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় টহল ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে। সন্দেহভাজন চোরাকারবারীদের তালিকা প্রস্তুত করতঃ তাদেরকে বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক টহল ও বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
রাজশাহী বার্তা/বার্তা সম্পাদক